নেপথ্যে বুকিং সহকারী নাম রাজশাহীতে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্র সক্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার : ট্রেনের টিকেট যেন সোনার হরিণ। রাজশাহী স্টেশন ঘিরে সক্রিয় টিকেট কালোবাজারী চক্রের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে টিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের পেছনে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন রাজশাহী স্টেশনের গুটিকয়েক অসৎ বুকিং সহকারী। সম্প্রতি এই চক্রকে ধরতে বিভিন্ন মহল থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ সহ প্রশাসনকে তাগাদা দেয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্দেহভাজন কয়েকজন বুকিং সহকারী গা-বাঁচাতে ছুটি নিয়েছেন।
সম্প্রতি দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার চাইতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের নির্দেশনা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। টিকেট নিয়ে সংকট বহুদিনের হলেও রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পর তা প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে টিকেট কালোবাজারী চক্র। ট্রেনের টিকেট যাত্রার ৫দিন আগে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত মোট আসনের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে টিকেট বিক্রি শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকামুখি চারটি ট্রেনের ক্ষেত্রে টিকেট সংকট প্রকট। অনলাইনে টিকেট নিতে যাত্রীর এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বর প্রয়োজন পরে। আর টিকেট কালোবাজারী চক্র নানা ভাবে অন্যদের এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইন থেকে টিকেট নামিয়ে নিচ্ছে। আর ট্রেনে টিকেট যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এনআইডি নম্বর যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এই চক্র।
রাজশাহী স্টেশন ঘিরে স্থানীয় কয়েকজন টিকেট কালোবাজারীর সাথে কথা হলে তারা জানান, টিকেট কালোবাজারীর সাথে রাজশাহী নগরীর কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান, বিমানের টিকেট বিক্রির দোকান সহ শিরোইল, মটপুকুর, শিরোইল কলোনী ও দরিখরবোনা এলাকার কয়েকজন যুবক জড়িত। তারা অন্যের এনআইডি সংগ্রহ করে অনলাইনে টিকেট সংগ্রহের পাশপাশি রাজশাহী স্টেশনের কিছু অসৎ বুকিং সহকারীর সহযোগীতায় দিব্বি এই কাজ করে চলেছে। ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৪টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। এই ট্রেনগুলোতে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে ৩৭৫ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে ৭২৫ টাকা। তবে কাউন্টার থেকে বুকিং সহকারীর মাধ্যমে দাললদের হাতে পৌছে তা হয়ে যায় যথাক্রমে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, আর ৭৮২ থেকে ৮৬৫ টাকার কেবিনের ভাড়া হয়ে যায় ১ হাজার টাকা। বিশেষ দিন বা ঢাকায় সরকারি চাকরির ইন্টারভিউয়ের তারিখ থাকলে কালোবাজারে এই টিকেটের দাম আরও বৃদ্ধি পায়।
সূত্র মতে, রাজশাহী স্টেশনের হেড বুকিং সহকারি এই স্টেশনে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগের কারণে তাকে রাজশাহী স্টেশনের বাইরে বদলি করা হলেও ৬ মাসের ব্যবধানে আবারো রাজশাহী স্টেশনে ফিরে আসেন। এই হেড বুকিং সহকারী তার দুই জন সহযোগী বুকিং সহকারীকে নিয়ে টিকেট কালোবাজারী নেটওয়ার্ক গুছিয়ে রেখেছেন। টিকেট চোরাকাবারী চক্রের সাথে রাজশাহী স্টেশনের টিকেট বুকিং সহকারীর পাশাপাশি এই স্টশনের একজন কর্তা ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক বিভাগের পদস্থ একজন যোগসাজশ রয়েছে।
সম্প্রতি রাজশাহী স্টেশনে টিকেট সংকট নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ প্রকাশিত হবার পর, ট্রেনের টিকেট কালোবাজার রোধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উদ্যোগী হয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম, পুলিশ কমিশনার ও র‌্যাব-৫ এর পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার রেলের টিকেট কালোবাজারী রোধে তৎপরতা শুরু করেছেন। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি নির্দেশনা মতো নির্ধারিত আসনের চাইতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। টিকেট কালোবাজারী রোধে রেল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। এই কাজে রেলের কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে স্টেশন এলাকার বাইরে কেউ কিছু করলে এনিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষভাবে কিছু করার থাকে না।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর