রেলস্টেশনে বসেছে ভেন্ডিং মেশিন, যাত্রীরাই কাটবেন নিজের টিকিট

সানশাইন ডেস্ক: দ্রুত ও বিড়ম্বনামুক্ত ট্রেনের টিকিট কাটতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ ২১ স্টেশনে ১৫টি অটোমেটিক ভেন্ডিং মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী সপ্তাহ থেকেই আন্তঃনগর ও স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা নিজেরাই ভেন্ডিং মেশিন থেকে কাটতে পারবেন টিকিট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপে কমবে যাত্রী হয়রানি।
এখন ট্রেনের টিকিট কাটা যায় কাউন্টার এবং অনলাইনে। এর মধ্যে অনলাইনে কাটার পর মূল টিকিট সংগ্রহ করতে হয় কাউন্টার থেকে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। এ ভোগান্তি কমাতে এবার রেলস্টেশনে চালু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিন। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে কমলাপুর রেলস্টেশনে চারটি, বিমানবন্দর স্টেশনে দুটি এবং চট্টগ্রামে দুটিসহ বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে বসছে ১৫টি স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিন।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে আগের বরাদ্দ করা খরচেই ১৫টি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে। এতে যাত্রীরা সহজেই কোনো বিড়ম্বনা ছাড়া টিকিট কাটতে পারবেন। এই মেশিনের মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। মেশিনে কোনো সমস্যা হলে পাশেই থাকছে ১০টি সার্ভিস বুথ। আপাতত মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম কার্ড দিয়ে টিকিটের দাম পরিশোধ করা যাবে।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির জানান, টিকিট ভেন্ডিং মেশিনে যাত্রীরা নিজেদের পছন্দমতো আসনশ্রেণি চিহ্নিত করে প্রেস করার পর নিজেদের মোবাইল নম্বর দেবেন। সেই নম্বরে ওটিপি যাবে। ওটিপি দিয়ে টাকা জমা দিলেই যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে রেলের সেবার মান উন্নত হবে। তবে রেলের টিকিট সংগ্রহ ছাড়াও অন্যান্য খাতে সেবার মান বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, এই অত্যাধুনিক মেশিন বসানোর পর এগুলোর সঠিক পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ এবং ডেডিকেটেড আইসিটি টিম দরকার। নতুবা একটা সময় পর এই মেশিনগুলো বিকল বা অকার্যকর হয়ে পড়বে।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্টশনে বসানো হচ্ছে ৬০টি জায়ান্ট স্ক্রিন। যাতে ট্রেনের সময় সূচির পাশাপাশি কত আসন খালি আছে তা জানতে পারেন যাত্রীরা। এর আগে ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ রেলওয়ের টিসি উপপরিচালক মো. আনসার আলী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে পনেরোটি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, ১০টি সার্ভিস কিয়স্ক পরিসেবা প্রযুক্তি ও ৬০টি জায়ান্ট স্ক্রিন ডিসপ্লে স্থাপন করার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
সাত কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নোক্ত স্টেশনসমূহে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, সার্ভিস কিয়স্ক পরিসেবা প্রযুক্তি ও জায়ান্ট স্ক্রিন ডিসপ্লে স্থাপন করার পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রম অনুরোধ করা হল। জায়ান্ট স্ক্রিন ডিসপ্লে-রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৩১টি (ঢাকা স্টেশনে ৩টি, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে-১টি, টঙ্গী, নরসিংদী, ভৈরব বাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, মাইজগাঁও, সিলেট, জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর টাউন, দেওয়ানগঞ্জ বাজার, তারাকান্দি, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম-২টি, কক্সবাজার-২টি, ফেনী, লাকসাম, কুমিল্লা, নাঙ্গলকোট ও চাঁদপুর) এবং পশ্চিমাঞ্চলে ২৯টি (রাজশাহী-২টি, নাটোর, সান্তাহার, জয়পুহাট, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, চিলাহাটি, টাঙ্গাইল, উল্লাপাড়া, পাবনা, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, মোবারকগঞ্জ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া ও কুড়িগ্রাম)।
রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আধুনিক এ মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে সহজ ডটকম। এর মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই নিজের টিকিট নিজে কাটতে পারবেন। তবে এজন্য অনলাইনে টিকিট কাটতে যে পরিমাণ চার্জ (২০ টাকা) দিতে হয়, ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট কাটলে একই পরিমাণ চার্জ কাটা হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারবেন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২৪ | সময়: ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ