পদোন্নতির প্রতারণা ফাঁস করাই হত্যাকান্ডের শিকার হন অধ্যাপক তাহের

স্টাফ রিপোর্টার : ২০০৫ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে যে সংযুক্তিগুলো দেয়া হয় সেগুলোতে প্রতারণা খুঁজে পান পদোন্নতি রিভিউ কমিটি। এই কমিটিতে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক তাহের। ড. মহিউদ্দিনের সঙ্গে অধ্যাপক তাহেরের পূর্ব থেকেই সম্পর্ক অবনতি ছিলো। এর আগেও ড. তাহেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন মহিউদ্দিন। পরে ড. মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন অধ্যাপক তাহের।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতির আবেদনে মহিউদ্দীনের প্রতারণার কয়েকটি বিষয় প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন অধ্যাপক তাহের। এ নিয়ে বিভাগের মিটিংয়ে মহিউদ্দিনের পদোন্নতির বিরোধীতা করেন অধ্যাপক তাহের। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়। সেই থেকে তাঁর ওপর ক্ষোভ ছিলো মহিউদ্দীনের। এই ক্ষোভ থেকেই ২০০৬ সালের অধ্যাপক তাহেরকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করেন তিনি।
এই মামলায় কোর্টের রায়েও বিষয়টি উঠে এসেছিলো। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আপীল বিভাগের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মহিউদ্দীন অনুমান করেছিলেন অধ্যাপক তাহের জীবিত থাকলে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার আশা একেবারেই শূন্য বলে অনুমান করেছিলেন ড. মহিউদ্দিন। এ কারণে ড. তাহের যাতে পদোন্নতির পথে বাধা না হন সেই পথ পরিষ্কার করতেই পরবর্তীকালে পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়।
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ রেশমী বলেছিলেন, ‘রাজশাহী আসার আগে আমি আমার স্বামীকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে, মহিউদ্দিনের প্রমোশনের (পদোন্নতির) ব্যাপারে অনিয়ম আছে এবং সে মিটিংয়ে না বলবে। পূর্বেও তার প্রমোশনের ব্যাপারে মিটিং হয়েছে এবং আমার স্বামী বিরোধিতা করেছে। এজন্য আসামি মহিউদ্দিন আমার স্বামীর সঙ্গে খারাপ আচরন করেছে। আমার স্বামী আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় বলে যে, মহিউদ্দিন তার সঙ্গে বেয়াদবি ও খারাপ আচরণ করেছে। এই একজন শিক্ষক সম্পর্কেই তার সাথে খারাপ আচরণ করার কথা আমি শুনেছি। এই কারণে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার স্বামী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মহিউদ্দিন। তিনবছর পূর্বে মহিউদ্দিন আমার স্বামীকে তিন তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দিবে বলেছিল। যা আমার স্বামী আমাকে জানিয়েছিলো।’
বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা জানান, অধ্যাপক তাহের হত্যার পর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব কর্মসূচির শুরুতে মিয়া মো. মহিউদ্দীনের উপস্থিতি ছিলো সরব। মানববন্ধনের ব্যানারের সামনে থেকে হত্যার প্রতিবাদ জানান তিনি। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, অধ্যাপক তাহের হত্যার ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়নে খুনিদের নানা লোভ দেখিয়ে হাত করাসহ লাশ গুম করা পর্যন্ত সকল পরিকল্পনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। যা আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছিলে। পরবর্তীতে বিভাগের রিভিউ কমিটিতে ড. মহিউদ্দিনের জালিয়াতির প্রমাণ মেলে।


প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৩ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর