সর্বশেষ সংবাদ :

চাঁদা না পেয়ে বহুতল ভবণের নির্মাণ কাজ বন্ধ স্থানীয় ‘সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি রাবির শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অদূরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ও মাইলস্টোন স্কুলের পশ্চিম পাশে বসবাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বাড়ির নির্মাণ কাজ শরু করেছিলেন। কিন্তুু বহুতল ওই ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর আগে ‘বিশেষ সুবিধা বা মোট অংকের চাঁদা’ না পাওয়ায় নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ড (দক্ষিণ) যুবলীগ সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ইয়ামিনসহ তার ক্যাডার বাহিনী গত বুধবার রাতে হামলা চালিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এর আগেও ওই এলাকায় ৩-৪টি ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এভাবেই দিনের পর দিন স্থানীয়  চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে।

 

 

 

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে নগরীর মতিহার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বাধা, চাঁদাবাজি ও হুমকির ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা ও ভবন নির্মাণের কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় মির্জাপুর ফ্ল্যাট মালিক সমিতির পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। থানায় অভিযোগ দেওয়া তিন শিক্ষক হলেন- ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম কনক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপি কুমার দাস এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. ওসমান গণি। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযোগের পূর্ব মূহুর্তে মতিহার থানার ওসি মো. রুহুল আমিন অভিযুক্ত ইয়ামিনকে ফোন করে থানায় ডাকলেও তিনি যাননি। এর কিছুক্ষণ পরেই ইয়ামিন ভুক্তভোগী এক শিক্ষককে ফোন থানায় কেন জিডি করতে গিয়েছেন এবং কাজ তাকেই দিতে হবে বলে হুমকি দেন।

 

 

 

 

 

জিডি ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, নগরীরর মতিহার থানার মির্জাপুর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা মিলে প্রায় ১১ কাঠা জমি ক্রয় করেন। বুধবার (২৪ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার মধ্যে বাড়ি নির্মাণের অংশ হিসেবে শ্রমিকেরা মাটি কাটছিলেন। এ সময় ইয়ামিন, আলামীন এবং এখলাছুর রহমানের নেতৃত্বে আনুমানিক ১৫-২০ জনের একটি দল ঘটনাস্থালে আসে। তারা দেশিয় অস্ত্রসহ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুটি ট্রাক ও এক্সকাভেটর ঘটনা¯’ল থেকে সরাতে বাধ্য করে। এ সময় তারা শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে বলে, তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না। এতে নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত শ্রমিকরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
ওই ভবন নির্মাণ কাজের রড মিস্ত্রি মো. রনি আলী বলেন, ‘বুধবার (২৪ মে) আমরা বিল্ডিং নির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ করছিলাম। সন্ধ্যার পর তারা কাজের সাইটে এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তারা আমাদের ট্রাক, এক্সকেবেটর সরিয়ে নিতে বলে। অন্যথায় তারা এগুলো পুড়িয়ে দিবে। আমরা ভয়ে সবকিছু সরিয়ে নিয়েছি। এসময় তারা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে অন্যকে এই কাজ করতে দিবে না। তারা নিজেরাই এই কাজ করবে বলে আমাদেরকে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।’

 

 

 

ভুক্তভোগী রাবির ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. ওসমান গণি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষকসহ ১৭ শিক্ষক-কর্মকর্তা মির্জাপুরে ১১ কাঠা জমি ক্রয় করে সেখানে ১১ তলা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিই। আমরা একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে গত বুধবার ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিš‘ হঠাৎ ওই দিন সন্ধ্যার পর ইয়ামিন ও আলামিনসহ প্রায় ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ নির্মাণ শ্রমিকদের মারপিট, অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা যাতে জীবনের নিরাপত্তাসহ নির্বিঘ্নে দ্রুত কাজ করতে পারি সেজন্য থানায় জিডি করেছি।
মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাসহ অন্তত ৪-৫টি মামলা রয়েছে। ৩০ নং ওয়ার্ডের যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, ইয়ামিন, আলামিনসহ ওই গ্রুপ এলাকায় প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইয়ামিনের বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এভাবে সবসময় অন্যায়-অত্যাচার করায় দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

 

 

 

 

অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ইয়ামিন বলেন, ‘যে জায়গাটিতে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি ময়লা আবর্জনার স্তূপ ছিল। আমরা স্থানীয় কয়েকজন মিলে জায়গাটি পরিষ্কার করি। সে সময় শিক্ষকেরা কথা দিয়েছিলেন বাড়ি নির্মাণের কাজটি আমাদের দিয়ে করাবে। কিন্তু হঠাৎ করে দেখি, বাইরের লোকজন গিয়ে কাজ করছে। পরে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। এখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যাকে কাজ দেয়া হয়েছে সে তো বড় বড় কাজ করে। সামান্য ছোট কাজে ও আসবে কেন? আমার বাড়ির পাশের কাজ। এর আশেপাশে কয়েকটি বিল্ডিং হয়েছে। সেখানে কিন্তুু আমি কাজ করেছি। এই কাজটাও আমাদেরকে দেয়ার কথা ছিল।’ থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলেও দাবি করেন ইয়ামিন।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘হয়তো তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে। নথি ঘেটে বিষয়টি বলতে পারবো।

সানশাইন/ সোহরাব


প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ | সময়: ৮:৫০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine