সর্বশেষ সংবাদ :

বাম্পার ফলনের আশা : বরেন্দ্রে বোরো কাটার উৎসব

আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী: বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। অপরদিকে কৃষি অফিস বলছে রাজশাহী অঞ্চলে বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্য মাত্রানির্ধারণ করা হয়েছিলো তা ছাড়িয়ে গেছে এবং ফলনও বেশ ভালই হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬৫ হাজার ৩০০ হেক্টর তবে তা ছাড়িয়ে গিয়ে আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশী জমিতে আবাদ হয়েছে।
রাজশাহী জেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪০ হেক্টর জমিতে বেশী আবাদ হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, এই বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন আশা করা যাচ্ছে বেশ ভালই হবে। তবে ঈদের আগের তাপদাহের কারণে জমিতে বেশী পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। এতে খরচ কিছুটা বেশী হয়েছে। ডিপটিউবওয়েল গুলোতে পানি কম উঠায় কৃষকদের দিনরাত জেগে পানি দিতে হচ্ছে।
এছাড়াও উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ঈদ পরবর্তি শিলা বৃষ্টিতে ধানের ফলন কমে যাওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। অপরদিকে সকল প্রকার সারের দাম বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ধানের আবাদের খরচ বেড়ে যাতে এতে করে ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন না বলে জানান তারা। এছাড়াও এবার ধানের যে দাম তা নিয়েও খুশি নন কৃষকরা।
উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের নবগ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ও জিরা শাইল জাতের ধান আবাদ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আশা করছি বিঘাপ্রতি ধানের ফলন ২০-২২ মণ হবে। তবে ধানের যে দাম, তা থাকলে তেমন ভাবে লাভবান হবেন না বলে জানান।
গোগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আদিল হোসেন বলেন, বোরো ধানের ফলন বেশ ভালই হবেই বলে আশায় ছিলাম কিন্তু ঈদের পরে যে শিলাবৃষ্টি হলো তাতে এই ইউনিয়নের, ধাতমা, বরশিপাড়া, বলিয়াডাইংসহ বেশ কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ধানের ফলন কমে যাবে।
তবে বিঘাপ্রতি এবার ধানের ফলন হচ্ছে ১৮-২২ মণের মধ্যে। এই ফলনও কম নয়। তবে ধানের দাম ১২ শত টাকা হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এই কৃষক।
দেওপাড়া ইউনিয়নের বিজয় নগর এলাকার কৃষক সাব্বির হোসেন জানান, ব্রি-৮৮ জাতের ধান ৭ বিঘা জমিতে লাগিয়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ ৯ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে ২০ থেকে ২২ মনের মধ্যে। তবে ধানের যে বর্তমান বাজার মূল্য মণ প্রতি ১২ শত টাকা।
এই মূল্য নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমন ধানের দাম ১৩০০ টাকা মণ আমরা পেয়েছি। বোরো ধানের আবাদে খরচ বেশী এর দাম ১২০০ টাকা মণ যদি হয় তাহলে আমাদের চলবে না। এছাড়াও সারের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়াতে আগামী আবাদে খরচ বেড়ে যাবে এবং দাম কম পেলে কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারাবে বলে জানান।
গত ১৮ এপ্রিল গোদাগাড়ী উপজেলার কদমশহর এলাকায় বোরো ধানের কাটা-মাড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন।
তিনি জানান, রাজশাহী জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো তা ছাড়িয়ে গেছে। এবার আবাদ ৩০০ হেক্টর বেড়ে ৬৮ হাজা ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ধানের ফলনও বেশ ভালই হচ্ছে বলে জানান।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে গোদাগাড়ীতে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েগেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটার আগের মুহূর্তে ধানের জমিতে সেচের জন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে জমিতে পানি বেশী লেগেছে।
ডিপটিউবওয়েল গুলোতে পানি কম উঠায় কৃষকরা সমস্যায় পড়ে। তবে তিনি বলেন, ধানের ফলন বেশ ভালই হয়েছে। আশা করা যায় কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফলস ঘরে তুলতে পারবে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩ | সময়: ৫:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ