সর্বশেষ সংবাদ :

সবজির বাড়তি দাম, ডিমের হালি ৫০ টাকা ব্রয়লার মুরগি এক লাফে ২৩০

সানশাইন ডেস্ক: প্রাণীজ আমিষের সহজলভ্য উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগির দাম চড়তে চড়তে ২৩০ টাকা ছুঁয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিমের দাম; ঢাকার বাজারগুলোতে এক হালি ডিম কিনতে গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দর এতটা বাড়তে তারা দেখেননি। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৯০ টাকা দাম বেড়েছে এই মুরগির। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির প্রতিদিনের বাজার দরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার ঢাকার ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। এই হিসাবে এক মাসে দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি।
কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ বলেন, “সারা বাংলাদেশেই মুরগি নাই। এইটা হইল আসল কাহিনী। আমরা তো কম দামে কিনতে পারি না, যেমন কিনি তেমন বেচি। পুঞ্জি খাটাইয়া কুলাইতে পারতেসি না।” ব্রয়লারের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সোনালি মুরগিরও। গত সপ্তাহে ২৮০-২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগি এখন দোকানভেদে ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। বাজারে সরবরাহ সংকটে থাকা লেয়ার মুরগির দাম ২৭০ টাকা থেকে হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি।
ডিমের দামও বাড়তি। ফার্মের মুরগির লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। হালি কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৪৫-৪৭ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৪০-৪২ টাকা। অর্থাৎ, এক মাসে দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। কারওয়ানবাজারের ডিম ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন বলেন, “ছোট খামারি অনেক মুরগি বসায় না। এজন্য দাম বাড়তেছে। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বড় ব্যবসায়ী যাদের কোটি টাকা লস গেলেও অসুবিধা নাই তারা টিকে আছে।”
ডিম-মুরগিতে আমিষের চাহিদা মেটানো ক্রেতারা বলছেন, ক্রমাগত এই দাম বৃদ্ধি তাদের জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলছে। কেউ কেউ কাটছাঁট করছেন কেনাকাটায়। সুলতান আহমেদ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাস্টার রোলে চাকরি করেন। কারওয়ান বাজারে এসে দুই কেজি ওজনের একটি মুরগি কিনতে গুণলেন ৪৬০ টাকা।
সুলতান বলেন, “সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছে। দুইটা মুরগি নিতে এসে দেখি একটাই ৫০০ টাকার কাছাকাছি। শুক্রবারে বাজারে আসছি, বাচ্চা আছে, একটু মাংস না নিলে হয় না, তাই নিছি। এত বছরের মধ্যে মুরগির এতো দাম আর দেখিনি।”
বাজারে চিনি মেলাই যেন ভার। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চিনি ছাড়ছে না কোম্পানিগুলো। খোলা চিনি পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে ১১২ টাকায়, আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। যদিও খোলা চিনি সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী কেজি প্রতি ১০৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
সরকার নির্ধারিত দামে প্যাকেটের চিনির দাম হওয়ার কথা ১১২ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে প্যাকেটের চিনি উধাও। যদি কোথাও পাওয়া যায়, সেটা ১৩০ টাকার কমে মিলছে না। কিছু দোকানে দেশি লাল চিনির প্যাকেট মিললেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, “চিনি চাইয়া পাওয়া যায় না। সরকারের ঠিক করা দামে কোম্পানি চিনি দেয় না। যারা বিক্রি করে তারা সবার কাছে বিক্রি করে না। নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমারের জন্য রেখে দেয়।”
বাজারে মুরগি ছাড়াও সব ধরনের মাংসের দামই বাড়তি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়; আর খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ৫০ থেকে হাজার ১১০০ টাকায়। সরবরাহ ভালো থাকায় নাগালের মধ্যে আছে সবজির দাম। তবে কাঁচা মরিচের বাজার অস্থিতিশীল। এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। পরিবর্তন আসেনি মাছের বাজারে। আদা-রসুন, চাল-আটার মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও গত সপ্তাহের মতই।
এদিকে বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বিশেষ করে বরবটি, করলা, পটল ও ঢেঁড়শের দাম সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, শীত মৌসুমের সবজি না হওয়ায় এগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। এদিকে সবজির দাম বেশি হওয়ায় অস্বস্তি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজারগুলোতে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, একইভাবে বাধাকপিও প্রতি পিস ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, সিম মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, খিঁড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে শীত মৌসুমের সবজি নয়, বাজারে এমন কিছু সবজির সরবরাহ একেবারেই কম দেখে গেছে। সে কারণে বাড়তি দামে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বরবটি প্রতি কেজি ১২০, করলা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পটল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী কাঁচা বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খালিলুর রহমান। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই রকমভাবে বাজারে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কিছুরই দাম কমে না। ভরা শীত মৌসুমে সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু শীত কমতে শুরু করতেই সবজিগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে। মাঝে মাঝে কোনো কোনো সবজির দাম কিছুটা বাড়ে আবার আগের দামে ফিরে আসে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে বাজারে সবজির দাম বাড়তিই যাচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজার ভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ৫/১০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজার থেকে মাল কেনার পর পরিবহন খরচ হয়। সে কারণে লাভ রেখে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। বাজার ভেদে সবজির দামে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না।
কিছু সবজি অতিরিক্তি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে-এর কারণ হিসবে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিগত কিছুদিন ধরে সবজির বাজার প্রায়রকম যাচ্ছে। তবে এখন মৌসুম না হওয়ায় কিছু কিছু সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে। এর কারণ হলো বাজারে সরবরাহ খুবই কম তাই দাম একুট বাড়তি।
তিনি বলেন, বরবটি, করলা, ঢেঁড়স, পটলের দাম সব ১০০ টাকার উপরে। কারণ এগুলো শীত মৌসুমের সবজি নয়। কিছু কিছু ক্রেতা এসব সবজি নিয়মিত কেনে তাই দোকানিরা অল্প পরিমাণে এসব দামি সবজি দোকানে রাখে। আসলে সব শ্রেণির ক্রেতারা এসব দামি সবজি কেনে না, এজন্য নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা আছে। তবে আবার যখন মৌসুম শুরু হবে তখন এসব সবজিই ৪০/৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ | সময়: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ