রাবিতে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষক- শিক্ষার্থী সমাবেশ

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং রাকসু ও সিনেট কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অবিলম্বে রাকসু ও সিনেট কার্যকর করাসহ ১৪ দফা দাবি পেশ করা হয়। অন্যান্য দাবিগুলো হল- আবাসন সংকট নিরসনে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, আবাসিক হলে রাজনৈতিক ব্লকের এর নামে দখলদারিত্ব নিষিদ্ধ করা, আবাসিক হলে ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খাবারের পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সপ্তাহে সাত দিন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, যাতায়াতের জন্য রুট বৃদ্ধি সহ পর্যাপ্তসংখ্যক বাস সংযুক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অবস্থান ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি নির্মাণ করা, বেনামে আদায়কৃত অযৌক্তিক ফি বাতিল করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সান্ধ্য আইন ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা, পরিক্ষার উত্তরপত্রে রোল নম্বরের পরিবর্তে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো কোড সিস্টেম চালু করা এবং পোষ্য কোটা বাতিল করা।
সমাবেশে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগটা খুব গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে এবং এমনসব উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যার প্রধান গ্রহনযোগ্যতা সরকারের আনুগত্য। তাদের মাথায় আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে সম্পূর্ন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে যাতে আনুগত্য থাকে, যাতে মত প্রকাশের অধিকার না থাকে, যাতে সেখানে একটা ভয়ের রাজত্ব তৈরি হয়, নির্য়াতনের অবস্থা তৈরি হয় সেটা যারা নিশ্চিত করবে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে। আর সেটাই হবে উপাচার্যের কাজ।
তিনি আরও বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. শামসুজ্জোহার মতো শিক্ষক ছিলেন। যিনি সামরিক, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বন্দুকের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের জন্য দাঁড়াতে পারেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উত্তরসূরি যারা শিক্ষক তারা কেন অবনত, আত্মসমর্পণকারী, আপসকারী, সুবিধাবাদী হবে? প্রশ্নটা তো সকলের মধ্যে আসার কথা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো সার্বজনীন বা সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার যা বলেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তা অনুসরণ করে তাহলে কখনো সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। সেটা হলে সেখানে কোন সৃজনশীলতা থাকে না, সেখানে কোন নতুন জ্ঞানের যোগ হয় না।
সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে বিশিষ্ট গবেষক ও রাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যদি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রন না থাকে তবে ক্ষমতা মানুষকে দানবে পরিনত করে। এটি মানুষের অর্ন্তগত ব্যাপার। ক্ষমতা মূলত চর্চা করার ব্যপার নয় বরং এর সাথে স্বচ্ছতা ও দ্বায়িত্বের বিষয়টি জড়িত। যা, নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ছাত্র হিসেবে, নাগরিক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে যে দায়িত্ব সে দায়িত্বের জায়গাটা আমাদের ছেড়ে দিলে চলবে না। প্রকৃত অর্থে আমরা সে জায়গাটা ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একরকম ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়েছি।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, ইংরেজরা চেয়েছিল আমাদের উপমহাদেশে কালো চামড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা হবে সাদা চামড়াদের আদলে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যার কারণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চাওয়া হয় ইউরোপের দেশের মতো বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে। বাংলাদেশকে কেন স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে হবে?
সমাবেশে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ খানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী, রাবির আরবী বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা, আইনজীবী আসলাম উদ দৌলা, হাসিবুল ইসলাম,বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখা, নাগরিক ছাত্র ঐক্য এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখাসহ অন্যান্য ক্রিয়াশীল বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ | সময়: ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ