আসরের সর্বোচ্চ রান তুলে চট্টগ্রামকে হারাল বরিশাল

স্পোর্টস ডেস্ক: তাজা ঘাসের ছোঁয়ায় সবুজাভ উইকেট। তবে সেই সবুজে বোলারদের প্রণোদনা নেই, বরং লুকিয়ে রইল ব্যাটসম্যানদে জন্য প্রেরণা। বাউন্স সমান, বল সুন্দরভাবে এলো ব্যাটে। তাতে রান উৎসবে মেতে উঠলেন ব্যাটসম্যানরা। টপ অর্ডারের কার্যকর ব্যাটিংয়ের পর ইফতিখার আহমেদের ঝড়ো ফিফটিতে বরিশাল তুলল এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান। রান তাড়ায় শুরুর আর শেষে ঝড় তুললেও পেরে উঠল না চট্টগ্রাম।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরে গেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ২৬ রানের জয়ে ফরচুন বরিশাল পেল টানা দ্বিতীয় জয়। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবার ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচে ২০১ রান করেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। পরের ম্যাচেই তাদের টপকে গেল বরিশাল। রান তাড়ায় চট্টগ্রাম যেতে পারে ১৭৫ রান পর্যন্ত।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৯ রান করে বরিশাল। আগের ম্যাচে চারে নেমে দুর্দান্ত ব্যাট করা মেহেদী হাসান মিরাজকে এ দিন নামানো হয় ওপেনিংয়ে। তার ঝড়েই শুরু হয় ম্যাচ। আবু জায়েদ চৌধুরির প্রথম ওভারে পরপর তিন চার মারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির পরের ওভারে প্রথম বাউন্ডারি মারেন আরেক ওপেনার এনামুল হক।
তৃতীয় ওভারেই আনা হয় স্পিন। বাঁহাতি তাইজুল ইসলামকে লং অন দিয়ে ছক্কায় ভাসান মিরাজ। তবে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ব্যাটসম্যান। তাইজুলের ওই ওভারের শেষ বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে আউট হন মিরাজ। ৩ চার ও ১ ছয়ে ১২ বলে করেন ২৪ রান।
মৃত্যুঞ্জয়ের পরের ওভারে পরপর দুই বলে দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে চার মারেন সাকিব। পরের বলে দারুণ এক কাটারে তাকে বোল্ড করে শোধ তোলেন মৃত্যুঞ্জয়। আরেক ওপেনার এনামুলকে ফেরান লঙ্কান লেগ স্পিনার ভিজয়াকান্থ ভিয়াসকান্থ। লং অফে লাফিয়ে যে ক্যাচটি নিলেন জিয়াউর রহমান, এবারের আসরের সেরা ক্যাচগুলির একটি তা নিশ্চিতভাবেই।
৫ চারে ২১ বলে ৩০ রান করেন এনামুল। পরের বলে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন থেকে বেঁচে যান মাহমুদউল্লাহ। টপ অর্ডারের তিন উইকেট পড়ে গেলেও বরিশালের রানের গতি কমেনি। চতুর্থ উইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে ৫.১ ওভারে ৪৯ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। ভিজয়াকান্থের দুই ওভারে দুটি ছক্কা মেরে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ২৫ রান করে জিয়াউরেরে বলে সুইপার কভারে ধরা পড়ে যান তাইজুলের হাতে।
আফগান ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম টানা ফিফটির সম্ভাবনা জাগালেও আউট হয়ে যান ২ রান আগে। তার ৩৩ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চারের সঙ্গে ৩টি ছয়। ইনিংসের বাকি গল্প জুড়ে শুধুই ইফতিখার। প্রথম ১৩ বলে স্রেফ ১০ রান করা ব্যাটসম্যান পরের ১৩ বলে করেন ৪৭ রান। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে শেষ ৩ ওভার থেকে ৫১ রান পায় চট্টগ্রাম।
আবু জায়েদের করা ১৯তম ওভারে পরপর তিন বলে তিন ছক্কা মারেন ইফতিখার। মৃত্যুঞ্জয়ের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে স্রেফ ২৫ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে পার করান দুইশ। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালো করেন চট্টগ্রামের ওপেনার উসমান খান। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট ছিল পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের ব্যাটিংয়ে। তার ঝড়ে ৪ ওভারে ৪০ রান তোলে চট্টগ্রাম।
পঞ্চম ওভারে কামরুল ইসলামের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন উসমান। ৩টি করে চার-ছয়ে ১৯ বলে তার রান ৩৬। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সেই ধারার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি চট্টগ্রামের টপ অর্ডারের অন্যরা। ম্যাক্স ও’ডাউড ২৯ বলে করেন ২৯ রান। উন্মুক্ত চাঁদ ১৯ রান করতে খেলেন ২১ বল। আফিফ হোসেন ২১ বলে ২৮ রান করলেও পরিস্থিতির দাবি ছিল আরও দ্রুত রান তোলা। রান-বলের সমীকরণে তাই ক্রমে জয় থেকে দূরে সরতে থাকে চট্টগ্রাম।
শেষ ৬ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ১০৭ রানের। জিয়াউর রহমান এরপর পুরনো দিনে ফিরে গিয়ে ম্যাচে প্রাণ ফেরান কিছুটা। নিজের সেরা সময়ে যেসব বড় শট খেলতেন তিনি, সেসবের কিছু ঝলক দেখান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। ৩ চার ও ৪ ছয়ে ২৫ বলে তার ৪৭ রানের ইনিংস দর্শকদের বিনোদনের খোরাক জোগায় কিছুটা। তবে জয়ের সম্ভাবনা সেভাবে জাগাতে পারেনি, স্রেফ তাদের পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমায়।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ