কি হচ্ছিল হোটেল ‘এক্সে’

স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর রাজপাড়া থানা অদূরে সদ্য চালু হওয়া হোটেল ‘এক্স’ এ প্রায়ই ডিজে পার্টির নামে নারীদের অশ্লীল নৃত্য ও দেহ প্রদর্শিত হয়। এ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ইতোপূর্বে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ওই হোটেলে নগরীর পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আগামী ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েদের নিয়ে ‘প্রথমনাথ রকস ব্যাচ পার্টি ২০২৩’ শিরোনামে গান বাজনার আয়োজন করা হয়। কিন্তু ওই গান বাজনার অনুষ্ঠানের বিষয়ে পিএন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কিছুই জানেন বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা তৌহিদ আরা। তবে অধিভাবক নামধারী কতিপয় নারীদের হোটেলে নীচ তলার লবিতে বসিয়ে রাখা হয়। এসব মূল আয়োজক ছিল নগরীর ‘জীবন বায়োলজি’ নামের একটি কোচিং সেন্টার এবং হোটেল ‘এক্স’ কর্তৃপক্ষ।
একাধিক অভিভাবকের অনুরোধে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক আনিসুজ্জামান ও সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সাদী হোটেল ‘এক্স’ আবাসিকে যান। সেখানে হোটেল রিসিভশনে গিয়ে অনুষ্ঠান ও আয়োজকদের সম্পর্কে বার বার তথ্য চেয়েও না পেয়ে দ্বিতীয়তলায় গিয়ে গানের স্টেজের কয়েকটি ছবি তোলেন। সেখানে গান-বাজনা ছাড়াও শাড়ি পরিহিত তরুণী মেয়েদের ও সাধারণ পোশাকের উঠতি তরুণদের ছবি ভিডিও করছিল অন্তত ১০/১২ জন যুবক। তারা কেউই পেশাদার সাংবাদিক কিংবা টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পার্সন নন। এরপর দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান বাইরে আসার সময় হোটেলের কর্মচারীরা তাকে ঘিরে ধরেন। তিনি নিজে সাংবাদিকের পরিচয় দিলে তাকে কৌশলে আটক করে মোবাইল ও পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কোচিং সেন্টারের লোকজন ও হোটেলে কর্মচারীরা। এক পর্যায়ে কোচিং সেন্টারের লোকজন ও হোটেলের কর্মচারীরা সন্ত্রাসী পারভেজকে এবং সাংবাদিক আনিসুজ্জামান রাজপাড়া থানা পুলিশ ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের ডাকেন। রাজপাড়া থানা পুলিশের এসআই কাজল কুমার নন্দীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য হোটেলে পৌছানোর একটু পরেই সন্ত্রাসী পারভেজ ঘটনাস্থলে যায়। সে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাংবাদিক আনিসুজ্জামানের ওপর হামলা চালায় এবং তার মোবাইল কেড়ে নেয়। এসময় সে তার পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম-মহাসচিব রাশেদ রিপন ঘটনাস্থলে পৌছে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা রাশেদ রিপনের ওপর চড়াও হয়। এরপর রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌছালে হোটেল কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কোচিং সেন্টারের লোকজন বেপরোয়া হয়ে সাংবাদিকদের ওপর গণহারে হামলা চালায় ও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আনিসুজ্জামান জানান, সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির নামে অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষকদের অবগত না করেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে? এ ব্যাপারে একাধিক অভিভাবক আমাকে বার বার ফোন করে অনুরোধ জানালে আমি সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার ওপর হামলা করার মত কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
রাজশাহী মেট্টোপলিট পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও চলাকালে কমিশনার স্যাারের অনুরোধে ৪৮ ঘন্টার সময় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এজাহার নামীয় দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করি ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ | সময়: ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ