সর্বশেষ সংবাদ :

অস্ট্রেলিয়ার আশা গুঁড়িয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্ক: ১৪২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম ৭ ওভারেই এলো ৭৪ রান। অনায়াস জয়ের পথে তখন ইংল্যান্ড। কিন্তু ভানিন্দু হাসারাঙ্গার পরপর দুই ওভারে জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলসের বিদায়ে বদলে গেল দৃশ্যপট। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে উল্টো শঙ্কায় পড়ল ইংলিশরা। বেন স্টোকসের দায়িত্বশীল ইনিংসে অবশ্য শেষ হাসি ফুটল তাদের মুখেই। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিশ্চিত করল তারা সেমি-ফাইনালের টিকেট।
সিডনিতে শনিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বের এক নম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচ ছিল এটি। আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া লঙ্কানদের জন্য এক রকম নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও ইংলিশদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। ৪ উইকেটের স্বস্তির জয়ে বাটলাররা চতুর্থবারের মতো জায়গা করে নিল শেষ চারে।
মাঠের লড়াই ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মাঝে হলেও প্রবলভাবে এই ম্যাচে সম্পৃক্ত ছিল অস্ট্রেলিয়া। লঙ্কানদের জয়ের ওপর যে নির্ভর করছিল তাদের শেষ চারে খেলার আশা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড। সুপার টুয়েলভ থেকেই বিদায় নিল গত আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অব্যাহত থাকল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরপর দুইবার কোনো দলের শিরোপা না জেতার এবং স্বাগতিকদের চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার ধারা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা পাথুম নিসানকার ৫ ছক্কা ও ২ চারে ৬৭ রানের ইনিংসে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দলের বাকিরা তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৮ উইকেট হারিয়ে কেবল ১৪১ রান করতে পারে তারা। বাটলার ও হেলসের ঝড়ে উড়ন্ত শুরু পায় ইংল্যান্ড। তাদের জুটি ভাঙার পরই পথ হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভারে ৫ রানের সমীকরণে। প্রথম তিন বলে তিন রানের পর চার মেরে ২ বল বাকি থাকতে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ক্রিস ওকস।
১ ছক্কা ও ২ চারে ২৮ রান করেন বাটলার। হেলসের ব্যাট থেকে আসে ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৪৭ রান। তিনে নেমে স্টোকস দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ২ চারে ৪২ রানে করে। তবে তাদের ছাড়িয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আদিল রশিদ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্রেফ ১৬ রান দিয়ে নিসানকার উইকেটটি নিয়ে লঙ্কানদের চেপে ধরার পথ করে দেন এই লেগ স্পিনার।
শ্রীলঙ্কাকে ভালো শুরুর আভাস দেন নিসানকা ও কুসল মেন্ডিস। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে স্টোকসকে ছক্কায় ওড়ান নিসানকা। পরের ওভারে মার্ক উডকে দুই ওপেনার মারেন একটি করে ছয়। চতুর্থ ওভারে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে মেন্ডিস বিদায় নিলে ভাঙে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে যান নিসানকা। স্যাম কারানকে টানা চার-ছক্কা মারেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তোলে লঙ্কানরা।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালাঙ্কা দ্রুত ফেরেন সাজঘরে। দুজনের কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। নিসানকা ৩৩ বলে স্পর্শ করেন বিশ্বকাপের চলতি আসরে দ্বিতীয় ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার নবম পঞ্চাশ। ষোড়শ ওভারে রশিদের বলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে তিনি বিদায় নিলে আর বেশিদূর যেতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। শেষ ২৮ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে স্রেফ ২৩ রান!
হেলস ও বাটলারের ব্যাটে সহজ জয়ের ভিত গড়ে ফেলে ইংল্যান্ড। দুই জনের খুনে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৭০ রান তোলে তারা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ৬ ওভারে যা সর্বোচ্চ। লাহিরুকে টানা দুই চার মারেন হেলস, বাটলার চারের পর ছক্কায় ওড়ান হাসারাঙ্গাকে। হেলস পরে কাসুন রাজিথাকে হাঁকান এক ছক্কা ও তিন চার।
অষ্টম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাটলার। এই লেগ স্পিনারের পরের ওভারে হেলস আকাশে তুলে দিলে ক্যাচ নেন বোলারই। ফিল্ডিংয়ের সময় কুঁচকিতে চোট পাওয়ায় ব্যাটিংয়ে নামেননি দাভিদ মালান। তার জায়গায় তিনে নামেন স্টোকস। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, মইন আলি।
বিনা উইকেটে ৭৫ থেকে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১১১। কারানও শেষ দিকে দলকে বিপদে ফেলে বিদায় নেন ১১ বলে ৬ রান করে। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রাখেন স্টোকস। শেষ পর্যন্ত ওকসকে নিয়ে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন এই অলরাউন্ডার। ৩ দলেরই পয়েন্ট সমান- ৭। রান রেটে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ সেরা নিউ জিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেরা হয়ে শেষ চারে গেল ইংল্যান্ড। বাজে রান রেটের জন্য বাদ পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ | সময়: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ