ভিসার অশ্রু ও আমিরাতের ইতিহাস

স্পোর্টস ডেস্ক: হাতে ৩ বল। রান প্রয়োজন ১০। নিতে পারলেই সৃষ্টি হবে নামিবিয়ার ইতিহাস। ব্যাটিং প্রান্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ফিফটি হাঁকানো ডেভিড ভিসা। মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফিফথ স্ট্যাম্পে করা বল হাঁকালেন লং অনে। উড়তে উড়তে বল বাউন্ডারির কাছে ধরা দেয় শারাফুর হাতে।
অসাধারণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন শারাফু। ধারাভাষ্যকার বললেন, ‘ম্যাচ উইনিং ক্যাচ।’ আউট হয়ে যান ভিসা। নামিবিয়ার পরিবর্তে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ে ইতিহাস গড়ে আরব আমিরাত। আমিরাতের ইতিহাস গড়া ম্যাচে মিশে আছে ভিসার কান্না। আউট হওয়ার পর যেন অধিক শোকে পাথর বনে যান তিনি। ডাগআউটে গিয়েও থামছিল না কান্না। মাথা নিচু করে ফেলছিলেন অশ্রু। শারাফুর তালুতে আটকে না যেয়ে বাউন্ডারি পেরোলেই যে হতো ভিন্ন কিছু। ভিসা হয়তো মানতে পারছেন না। ভিন্ন কিছুর আমেজ দিয়েই যে বিশ্বকাপে তাদের শুরুটা হয়েছিল।
প্রথম রাউন্ডের প্রথম দিনেই এশিয়া চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চমকে দেন বিশ্বকে। মাঝে নেদারল্যান্ডসের কাছে হার। এবার আমিরাতকে হারাতে পারলেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সুপার টুয়েলভের টিকিট পেতো নামিবিয়া। তাদের হারে টিকিট পেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ২৪ অক্টোবর এই ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন।
জিলংয়ে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফিফটিতে ১৪৮ রান করে আমিরাত। টি-টোয়েন্টিতে এই রান মামুলি। তবে শুরুটা হতে হবে ভালো। এখানেই পিছিয়ে গেছে নামিবিয়া। তবুও রুবেনকে সঙ্গে নিয়ে ভিসা দেখান জয়ের স্বপ্ন। ৬৯ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর দুজনে ৪৪ বলে ৭০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ে যান শেষ ওভার পর্যন্ত। কিন্তু ভিসার আউটে সব শেষ হয়ে যায়। শেষ ২ বলে আসে মাত্র ২ রান। নামিবিয়া থামে ১৪১ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ী ম্যাচে ভিসা গোল্ডেন ডাক। কিন্তু এবার হতে পারতেন রূপকথার নায়ক। তাইতো ৩৬ বলে ৫৫ রান করা ভিসার আক্ষেপ ভিসার কান্না থামছেই না।
ম্যাচ শেষে ভিসার প্রশংসা করে নামিবিয়ার অধিনায়ক গেরহার্ড ইরাসমাস বলেন, ‘সে আমাদের দলের একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, ম্যাচ উইনার। সে বিশ্বের সব জায়গায় খেলেছে। আমাদের দলের ক্রিকেটাররা তার থেকে শেখে। সে আজও নিজেকে প্রমাণ করেছে, দলকে জয়ের কাছে নিয়েছে।’ কারো সুখের পেছনে থাকে কারও অশ্রু। নামিবিয়া না কাঁদলে হয়তো আমিরাতের আনন্দের মুহূর্তটা আসতো না। নিজেরা আগেই ছিটকে গেছে, তবুও তাদের কাছে জয়ের গুরুত্বটা ছিল অনেক। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম জয় বলে কথা। ম্যাচ শেষে কথা বলতে গিয়ে অধিনায়ক রিজওয়ানের চোখে মুখে ফুটছিল উচ্ছ্বাস।
রিজওয়ান বলেন, ‘প্রথমত আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আরব আমিরাত ক্রিকেটের এটি অনন্য মুহূর্ত। বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয়। আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ।’ ‘এই জয় আমিরাত ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমরা নিজেদের উন্নত করতে চাই, বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই যে আমরা শুধু এখানে অংশ নিতে আসিনি, আমরা প্রভাব রাখতে চাই’-আরও যোগ করেন রিজওয়ান।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২২ | সময়: ৬:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ