বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে শান্তি রক্ষায় সব ধর্মের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “সে যে ধর্মেরই হোক, যেই হোক, কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত দিতে পারবে না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। সেটা যে কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
শারদীয় দুর্গোৎসবের নবমীর দিন মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সব সময় চেষ্টা করি এই দেশটা যেন সব সময়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে পারে।”
গত গত বছর দুর্গাপূজার সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা তুলে কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেই বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা দেখতে হবে।
“কোথাও কোনো দুর্ঘটনা হলেই অমনি সেটা খুব বড় করে না দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টার দিকে আপনাদের নজর দিতে অনুরোধ করবো। সেই সাথে সাথে আপনাদের সহযোগিতাও চাইব।” ইসলামকে শান্তি ও উদারতার ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আমাদের ইসলাম ধর্মেই এটা নির্দেশ আছে যে সকল ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানো ৃ সূরা কাফেরুনে স্পষ্ট লেখা যে, লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়া দিন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। সেটা আমরা সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করি।”
সব ধর্মের অন্তর্নিহিত বাণী উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ কাউকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই প্রত্যেকটা ধর্মেরই নিজস্ব কোনো না কোনো শক্তি আছে, যে শক্তিটা মানুষের অন্তরে সব ধরনের প্রেরণা জোগায়, সাহস জোগায়, শক্তি জোগায়।
“কাজেই এই কথাটা সবাইকে চিন্তা করে সকল ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় উদারতা। আর সেই চেতনা নিয়েই জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমরা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়তে চাই।” চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের একতা সংঘের দুর্গাপূজা মণ্ডপ নজর কেড়েছে সবার।
মহালয়া উপলক্ষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বরদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে নারী-শিশুসহ ২৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিসর্জনের সময় সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। কারণ সেই সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই নৌকায় করে আপনাদের যেতে হয়। একটু সচেতন থাকবেন যেন আবার কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশ ছাড়াও সারাবিশ্বের সাধারণ মানুষের আর্থিক কষ্টের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ করব, কোনো এলাকায় এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে।
“কারণ সারাবিশ্বে এখন যে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে, আমি যখন জাতিসংঘে গিয়েছি, সেখানে অনেকে..অনেক দেশের..তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে আলোচনা হয়েছে। সবাই খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত যে ২০২৩ সাল অত্যন্ত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরও ব্যাপক দেখা দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের দেশের মানুষকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।” এই দুঃসময়ে সবাইকে সঞ্চয় বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানিসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।