সর্বশেষ সংবাদ :

লোডশেডিং: গরমে মারা যাচ্ছে মুরগি, ব্যবসা ‘গুটাচ্ছে’ খামারিরা

সানশাইন ডেস্ক: ছয় বছর আগে লেয়ার মুরগির খামার শুরুর পর ভালোই চলছিল ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের। কিন্তু মহামারীর সময় থেকে ব্যবসায় বিপত্তি আসতে থাকে। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে প্রতিদিন তার খামারে ১০ থেকে ১৫টি মুরগি মারা যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ খামারি।
সাখাওয়াত বলেন, “ব্যবসা শুরুর দিকে চার বছর ভালো কাটলেও করোনার সময় থেকে মুরগির খাবারের দাম দফায় দফায় বাড়ার কারণে অনেকটা চাপের মধ্যে আছি। গেল দুই বছর ধরে লস দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। “সম্প্রতি অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে প্রতিদিন খামারের ১০ থেকে ১৫টি মুরগি মারা যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে মুরগি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও অনেক কমে গেছে।”
সাখাওয়াতের মত জেলার অন্য খামারিদের হালও একই। অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে ময়মনসিংহের প্রায় প্রত্যেক খামারেই মোরগে মড়ক দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক খামারি লোকসান গুণে ব্যবসা ঘুটিয়ে নিচ্ছেন। পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ভুর্তিকীর দাবি করেছেন তারা। জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহে ব্রয়লার মুরগির নিবন্ধনকৃত বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা ৪৩৮টি, অনিবন্ধকৃত ৫ হাজার ২২৭টি, নিবন্ধনকৃত লেয়ার মুরগির খামার ৩১৫টি, অনিবন্ধনকৃত ৪ হাজার ৭৮৩টি, নিবন্ধনকৃত কক মুরগির খামার ৩৭টি, অনিবন্ধনকৃত ১ হাজার ২১৩টি, নিবন্ধনকৃত হাঁসের খামার ৬১টি এবং অনিবন্ধকৃত ১ হাজার ৬৫টি।
তারাকান্দা উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের খামারি আলমগীর হোসেন কন্ঠে ক্ষোভের স্বর তুলে জানালেন, ব্যবসাটা ছাড়তে পারলে বাঁচেন। কেন জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, “অন্যদের দেখে মুরগির খামার শুরু করেছিলাম। শুরুর দুই বছর ভালোই চলছিলো। কয়েক বছর আগে মুরগির খাবারের দাম কম থাকায় লাভ বেশি হয়েছে। আগে যে দামে সয়াবিন কিনতাম এখন দাম দ্বিগুণ হয়েছে। প্রোটিন এবং ভুট্টার দামও বেড়েছে। মেডিসিনের দাম বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। কিন্তু মুরগির দাম খুব একটা বাড়েনি।”
“এক কেজি ওজনের মুরগি তৈরি করতে খরচ হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আমাদের বিক্রিও করতে হয় একই দামে। এখনতো গরমে স্ট্রোক করে প্রতিদিন মুরগি মারা যাচ্ছে।” যোগ করেন তিনি। দেনাগ্রস্ত হয়ে সাত বছর আগে তৈরি করা মুরগির খামার গত তিনমাস আগে গুটিয়ে নিয়েছেন রামচন্দ্রপুর গ্রামের শাহিন আহম্মেদ।
শাহিন বলেন, “দশ লাখ টাকা দেনার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। মুরগির খাবারের সঙ্গে ডিমের বাজারের সামাঞ্জস্য না থাকায় আমার এই করুণ দশা হয়েছে। এ ব্যবসার শখ মিটে গেছে, তাই গত তিনমাস আগে তওবা করে সবকিছু গুটিয়ে নিয়েছি।” তার মতো আরও অনেক খামারি ব্যবস্থা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে চলে গেছে বলে জানালেন শাহিন। সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের খামারি আনোয়ার পারভেজ বলেন, “পোল্ট্রি মুরগির একটা বাচ্চা আমাদের কেনা পড়ে ৪২ টাকা। তারপর খাবার খাইয়ে বড় করতে হয়। এখন দিনে চার ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিং এর কারণে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। ডিজেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৩৪ টাকা। তাহলে আমাদের লাভ কোথায়?
“সরকার ঘোষণা দিছে, রাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকবে কিন্তু কই আমরা তো এর সুফল পাচ্ছি না। এখন না পারতেছি ব্যবসা ছাড়তে, না পারতেছি ধরে রাখতে।” খামারে কাজ করে পাঁচ সদস্যের সংসার ভালোভাবেই চালাচ্ছিলেন ওই এলাকার হারুন অর রশিদ। কিন্তু মালিকপক্ষ হঠাৎ করে খামার বন্ধ করায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। খামার টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।
ঘন ঘন লোডশেডিং আর মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিদের ক্ষতির কথা স্বীকার করে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, “পোল্ট্রি খামার একটি সেনসেটিভ বিষয়। সবচেয়ে বড় ফ্যাক্ট তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পোল্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। খামারে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে বিশেষ করে পোল্টি মুরগি স্ট্রোক করে। “গরমে অনেক খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামারি রয়েছে যাদের জেনারেটর কেনার সামর্থ্য নেই। তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিনসেডের চালায় পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।”
এ পরিস্থিতিতে কতগুলো খামার বন্ধ হয়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন খামার হলে আমরা তথ্য পাই। কিন্তু কেউ খামার ছেড়ে দিলে সেই তথ্য পাওয়া যায় না। তাই এর সংখ্যাটা বলতে পারছি না।”


প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২ | সময়: ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ