উন্নত জাতি গঠন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক

নুরুজ্জামান,বাঘা : বিবেক-জ্ঞান-বুদ্ধি ও মনুষ্যত্বের কারণে মানুষকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়। সততা ,নীতি , নৈতিকতা , দেশপ্রেম , পরোপকার এবং আদর্শ চরিত্রবান মানুষ হওয়ার মূল ভিত্তি সুশিক্ষা। উন্নত জাতি গঠন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শবান মানুষ হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক শিক্ষা।

এমন একটি সময় ছিলো যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শিশুদের বাড়ী থেকে বের হয়ে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে নানা ভাবে এর পরিবর্তন ঘটেছে। এখন শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রায় প্রতিটি ওয়াডে গড়ে উঠেছে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় অথবা কির্ন্টরগার্ডেন স্কুল। আর এসব স্কুলে পড়া লেখার পাশা-পাশি গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে শিশুরা খেলা-ধুলা করে আনন্দ পাই।

সুশীল সমাজের মতে, প্রাথমিক শিক্ষা একজন শিশুর সামাজিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বুনিয়াদি শিক্ষা । যা আগামী দিনের কাণ্ডারী হওয়ার পথ তৈরি করে দেয়। তাই এই শিক্ষাকে মানুষ গড়ার আঁতুড়ঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিশুকে ভবিষ্যতের দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা হলো প্রথম ও প্রধান সোপান। এক কথায় প্রতিটি শিশুর সুষ্ঠ সামাজিকীকরণ, আনন্দময় বর্তমান, সৃজনশীল ভবিষ্যৎ ও প্রগতিশীল উৎপাদন উন্নত সমাজ বিনির্মানের গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে । আর এই কাজটি সম্পাদন করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত বাঘা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনজারুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে ৭-৮ বছর পূর্বেও শ্রেনী কক্ষ সংকটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাদা-গাদি করে ক্লাস নিতে হতো। অথচ এখন আর সেই সংকট নেই। গত কয়েক বছরে বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় নতুন-নতুন বহুতল ভবন নির্মান করে দিয়েছেন। সেই সাথে আরো দিয়েছেন, বাউন্ডারি ওয়াল। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে এখন অনেক পরিবর্তন ঘটেছে ।

বাঘার শিক্ষা অনুরাগী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির দিক তাকালে দেখা যায়, দেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তৃতিতে গত ১০ বছরের হিসেব অন্তে পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এর প্রধান কারণ, মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে। এখন সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার যে কোন বিকল্প নেই সেটি বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিয়মান হচ্ছে। তাছাড়া আদর্শ জাতী গঠনে শিক্ষকরাও এখন বেশ ভুমিকা পালন করছে। তিনি বছরের শুরুতে সরকারি ভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে রঙিন বই তুলে দেওয়াকে ইতিবাচত হিসাবে মন্তব্য করেন।

এক সমিক্ষায় জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা করেছিলেন জাতীর জনক। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত আরও পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে চার দফার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনেই রঙিন বই তুলে দেয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং চালু, সরকারি বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও আয়োজন সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিনি পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্তীদের বিনোদনের ব্যবস্থা ও শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি-সহ লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু, এবং পর্যায় ক্রমে প্রতি বছর যে পরিমান শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন আনুপাতিক হারে সেই পরিমান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগও সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের কাছে প্রশংশীত হচ্ছে ।

রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক মুখপত্র জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে, যা বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্র-ছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়া-সহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন রোল মডেল আমাদের বাংলাদেশ।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর মো: মামুনুর রহমান বলেন, পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার অমলুক পরিবর্তন এসেছে। এখন শিক্ষকরা ঝরে পড়া রোধে মাঝে মধ্যেই মা’সমাবেশ করছেন। এর ফলে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা সতর্ক হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হার বাড়ছে। তাঁর মতে, এ উপজেলায় ৭৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ২৫ টি কির্ন্টরগার্ডেন। সেখানেও মান সম্মত লেখা-পড়া হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২ | সময়: ৪:৪৩ অপরাহ্ণ | সানশাইন