ই-পেপার
সর্বশেষ সংবাদ :

না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাদা মনের মানুষ বাঘার শামসুদ্দিন

নুরুজ্জামান,বাঘা:

রাজশাহীর বাঘার সররেহাট গ্রামে অবস্থিত কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ বৃদ্ধাশ্রামের পরিচালক শ্রদ্ধেয় শামসুদ্দিন ওরফে শমেস ডাক্তার আর নেই। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

 

শনিবার (১২ অক্টোবর) আনুমানিক দুপুর সোয়া একটায় তিঁনি নিজ গৃহে বাধ্যক্ত জনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন(ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি ছিলেন মানবতার কল্যাণে নিরলস পরিশ্রমী একজন সমাজসেবক ও সাদা মনের মানুষ। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে অনেকেই দোয়া ও শ্রদ্ধাজলী জানিয়েছেন।

কল্যানী শিশু সদন ও মমতাজ বৃদ্ধাশ্রামের অবস্থান রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে বাঘা উপজেলার সরেরহাট গ্রামে। এর পরিচালক সাদা মনের মানুষ ও পল্লী চিকিৎসক শামসুদ্দিন ওরফে সমেশ ডাক্তার। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন থেকে ফিরে যুদ্ধে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নিয়ে প্রথমে গড়ে তোলেন একটি ছোট্ট এতিমখানা। যার নাম দেওয়া হয় “সরেরহাট কল্যানী শিশু সদন”। শুরুতে এখানে এতিমের সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২’শ জনে। গত কয়েক বছর পূর্বে এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে মমতাজ বৃদ্ধাশ্রাম। এখানেও প্রায় অর্ধশত বৃদ্ধা রয়েছে।

 

শামসুদ্দিনের ছেলে কমল সরকার জানান, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা। কেবলমাত্র সনদপত্র সংগৃহীত না থাকার কারণে তিনি সরকারী ভাবে সম্মানী ভাতা পাননি। এতিমদের বেদনা আমার বাবাকে কাতর করতো। এ কারণে মায়ের মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি কিনে একটি ঘর তুলে চালু করে ছিলেন এতিমখানা। ১৯৮৪ সাল থেকে টানা ১১ বছর আমার বাবা নিজের ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করে এই এতিমখানাটি পরিচালনা করে আসছেন। আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একমাত্র বসত-ভিটা সেটিও বিক্রয় করে নিজেই পরিবার-পরিজন নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। তার পরেও তিনি হাল ছাড়েননি।

 

পরবর্তীতে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের লেখনির মাধ্যমে আমার বাবা এতিম খানার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা থেকে অনুদান পাওয়া শুরু করেন। এমনকি সরকারী ভাবে টেলিভিশনে আমার বাবাকে সাদা মনের মানুষ হিসাবে ভুষিত করা হয়। এর ফলে সমাজের বিত্তবান-সহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত সাহায্য করে আসছেন।

 

তিনি আরও জানান, এই এতিমখানাটি ১৯৯৪ সালে সরকারি ভাবে রেজিষ্ট্রেশন পায়। সে সময় কারিতাস নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থে কিছু ঘরবাড়ি তৈরী হয় এবং তারা ১০ জন এতিমকে ৩ বছর মাথা পিছু ৪শ’ টাকা করে উপবৃত্তি দেয় ।সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ বৃদ্ধা শ্রমের সম্মানে নব-নির্মিত তৃতীয় তলা ভবনের শুভ উদ্বোধন করা হয়ছে। খুলনার সাবরিনা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর শামছুল আলম রঙিন ফিতা কেটে এই ভবনের উদ্বোধন করেছেন।

 

মোরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার(১২ অক্টোবর) বাদ মাগরিব তাঁর নিজ গ্রাম সরেরহাট স্কুল মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ এশা ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে উপজেলা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৫ বছর। তিনি তার স্ত্রী দুই ছেলে ও চার মেয়ে-জামাতা সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী ও আত্নীয় স্বজন রেখে গেছেন।

 

এদিকে মরহুমের মৃত্যুতে তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন এবং পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহু তায়ালার নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম, বাঘার দু’জন পৌর মেয়র, ৭ জন চেয়ারম্যান ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব সহ সর্বস্তরের মানুষ।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪ | সময়: ৬:১৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine