সর্বশেষ সংবাদ :

অসম লড়াইয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সান্টু

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: আসন্ন আগামী ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাগমারায় চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাগমারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. জাকিরুল ইসলাম সান্টু (ঘোড়া), বাগমারা উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার (মোটর সাইকেল) ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক সরকার ওরফে আর্ট বাবু (আনারস)।
স্থানীয় ভোটার ও আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বাগমারায় এবারের উপজেলা নির্বাচন হবে উত্তাপহীন। এখানে ভোটার উপস্থিতি আশানুরুপ হওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মী। তারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম সান্টু। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত যোগ্য প্রার্থীই এখানে নেই।
তাদের মতে, এ যেন বাঘে বকরী লড়াই হওয়ার মত। এখানে তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জাকিরুল ইসলাম সান্টুর (ঘোড়া) সাথে নাছিমা আক্তারের (মোটরসাইকেল)। অদ্যাবধি নির্বাচনী মাঠে এই দুইজন প্রার্থীর উপস্থিতি প্রচার প্রচারণা চোখে পড়ার মতো। তবে আব্দুর রাজ্জাক সরকার ওরফে আর্ট বাবুর (আনারস মার্কা) নির্বাচনী মাঠে কোনই প্রচার প্রচারণা নেই। নেই কোন নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার লিফলেট ও মাইকিং। দলীয় নেতা কর্মীদের মতে, শেষ পর্যন্ত আর্ট বাবুর নির্বাচনী মাঠ থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এই নির্বাচন তিনজন প্রার্থী প্রতীক পেলেও মাঠে সরব রয়েছেন দুইজন প্রার্থী। বলা যায় এখানে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই লাড়াইও ব্যাপক ভারসাম্যহীন হতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা ঘোড়ার সাথে মোটরসাইকেলের লড়াইকে বাঘ বকরির সাথে তুলনা করেছন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, আমি তাঁর (নাছিমা) নাম নিতে চাই না। তাঁর কোন দলীয় পদপদবী নেই। তারা একটি উৎভট পরিবার। তাঁর স্বামী একটা উৎভট। ইউনিয়নের মেম্বার থেকে শুরু করে এমপি ভোট পর্যন্ত করেছে। কোথাও জয়লাভ করতে পারেনি। এই মহিলা (নাছিমা) ওই একি লাইন ধরেছে। তবে তার পরিনতি তার স্বামীর (প্রাক্তন) মতই হবে।
আসন্ন বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নানান জল্পনা কল্পনার অবসার ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক সরকার ওরফে আর্ট বাবু। বাগমারার রাজনীতিতে হটাৎ আবির্ভূত কে এই আর্ট বাবু এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা উপজেলার সাধারণ ভোটার ও জনতার মাঝে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ বাগমারা ও আশে পাশের এলাকার ত্রাস ছিলেন এই আর্ট বাবু। তার নাম শুনলে সাধারণ মানুষ ভয়ে কেঁপে ওঠত। নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল) লাল পতাকার কর্ণধার ছিলেন এই আর্ট বাবু। কেন তিনি নিষিদ্ধ জগতে চলে গেলেন। কেনই বা মেতে ওঠলেন মানুষ খুনের মিশনে। পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক সরকার পিতার নাম নুরুল হুদা। আর্ট বাবুর বাড়ি তাহেরপুর পৌরসভার চৌকিরপাড়া মহল্লায়।
তিনি ছিলেন খুব নামকরা আটিস্ট ও মেধাবী ছাত্র। ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে লিখাপড়ার গন্ডি শেষ করতে পারেননি। এরি মাঝে তিনি অন্ধকার জগতে পাড়ি জমান। দুল সরকার, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান, আব্দুল হামিদ মরু, প্রফেসর আব্দুল ওয়াহেদ ও আলো খন্দকার সহ বাগমারার ডজন খানেক জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার মাষ্টার মাউন্ড ছিলেন এই আর্ট বাবু। পরে ২০০৪ সালে বাংলা ভাইয়ের আগমন ও চরমপন্থী নিধন অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান আর্ট বাবু। এ সময় বাংলা ভাইয়ের হাতে ও র‌্যাব-পুলিশের ক্রস ফায়ারে বেশ কিছু চরমপন্থী ক্যাডার নিহত হন। পরে বাংলা ভাইয়েরও পতন হয়। এ সময় আত্মগোপনে থাকা আর্ট বাবু ঢাকায় গ্রেফতার হন।
পরে ২০১৮ সালে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক চরমপন্থী ক্যাডার পাবনা জেলা স্টেডিয়ামে বর্তমান স্বরাষ্ট মন্ত্রী আসাদুজ্জামানের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্ম সমর্পন করেন। পরে সরকারের কাছে প্রাপ্ত অনুদানের অর্থে বাগমারায় প্রাক্তন ক্যাডারদের নিয়ে স্বপ্ন চাষ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন আর্ট বাবু। এভাবেই চলছিল আর্ট বাবুর দিন-যাপন। আর্ট বাবু উপজেলা কৃষক লীগের সম্পাদক ছিলেন।
স্থানীয় আ’লীগের প্রবীন নেতা উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা বিরেন্দ্রনাথ সরকার বলছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জাকিরুল ইসলাম সান্টুর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার যোগ্য ছিলেন এনামুল পন্থী নেতা মতিউর রহমান টুকু। কিন্তু টুকু প্রতিপক্ষের হামলা নির্যাতনের ভয়ে সরে দাঁড়ালে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে এনামুল হক আর্ট বাবুকে বেছে নিয়েছেন। তবে আর্ট বাবু বলছেন তিনি জনগণের প্রার্থী। কোন নেতার আর্শিবাদে প্রার্থী হননি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতার বিষয়ে আর্ট বাবু বলেন। আমি জনগণের প্রার্থী। অন্ধকার বাগমারাকে আলোকিত করেছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় জুলুমের প্রতিবাদ করতেই আমি নিষিদ্ধ জগতে পা দিয়েছিলাম। আজ সরকার আমাদের সাধারণ ক্ষমা করেছেন এবং পূনর্বাসনের জন্য প্রকল্প দিয়েছেন। এখানে নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হলে আমি বিজয়ী হব।
আপামর বাগমারাবাসী তথা কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ আমার পাশে রয়েছে। আর্ট বাবুর এমন দাবীর প্রেক্ষিতে উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা বিরেন্দ্রনাথ সরকার আবারও বলেন, আর্ট বাবু বা তার কৃষকলীগের সাথে উপজেলা আ’লীগের কোন সংম্পৃক্ততা নেই। এনামুল হক তাকে কৃষক লীগের নেতা বানিয়েছেন। আর্ট বাবুর দৌড় ওই এনামুল পর্যন্তই।
এদিকে আসন্ন বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেকটা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছেন এ্যাড. জাকিরুল ইসলাম সান্টু। শুধু দিন গননার অপেক্ষা। দলীয় নেতা কর্মী ও ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে সান্টুর বিজয় অনেকটা নিশ্চত।
তাদের মতে, বিগত সংসদ নির্বাচনে যারা এনামুল হকের কাঁচি প্রতীকের ভোট করেছে। তারা এবার ঘোড়ায় চড়ে কলসীর পানি পান করতে চাইছে। অর্থাৎ কলসী প্রতীকে দলীয় সমর্থিত প্রার্থী হয়েছেন কোহিনুর বানু।
এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এনামুল পন্থী হিসাবে পরিচিত আরো দুজন প্রার্থী হয়েছেন। তার হলেন, এনামুল পন্থী সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি (প্রজাপতি) ও একই ঘরনার প্রার্থী শাহিনুর খাতুন (ফুটবল)।
তবে এই নির্বাচনে এই দুজনের জয়লাভের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতা কর্মী। এছাড়া এই নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আগেই জয়লাভ করেছেন শাহিদুল ইসলাম শহিদ। তিনি ইউনিয়ন আ’লীগের নেতা।
এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে জাকিরুল ইসলাম সান্টু বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবার বিজয় তাঁর সন্নিকটে এসেছে। এবারের নির্বাচনে তিনি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কেমন বাগমারা গড়তে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে সান্টু বলেন, আমার শিষ্য বর্তমান সাংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। তাঁকে সাথে নিয়ে অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই। এখানে বেকার সমস্যা প্রকট। এটা নিয়ে বড় কিছু করা দরকার।


প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৪ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ