এক টেস্টে এত বিরল ঘটনা

স্পোর্টস ডেস্ক: পাঁচ বছর পর বুলাওয়ায়োর কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে গড়াল টেস্ট ম্যাচ। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ লাল বলে মুখোমুখি হলো পাঁচ বছর পর। ম্যাচটি সাক্ষী হলো বিরল সব ঘটনার। যার কোনোটি সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে দেখা গেল প্রথমবার, কোনোটি দ্বিতীয়বার।
পঞ্চম দিনে ব্যাটিং নেমেই যেমন ইতিহাসে নাম উঠে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও তেজনারাইন চন্দরপলের। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ২ হাজার ৪৮৯ ম্যাচে কোনো টেস্টের পাঁচ দিনেই ব্যাটিং করা প্রথম জুটি তারাই।
বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে খেলা হয় কেবল ৫১ ওভার, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনারই অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে। দ্বিতীয় দিনেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি, ব্র্যাথওয়েট ও চন্দরপল অপরাজিত থাকেন সেঞ্চুরি করে।
তৃতীয় দিনে ব্র্যাথওয়েট আউট হন ১৮২ রান করে, চন্দরপল করেন অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরি। চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়ে ইনিংস ঘোষণা করার পর শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন ব্র্যাথওয়েট-চন্দরপল। সেখান থেকে আবার শেষ দিনের ব্যাটিং শুরু করে ইতিহাসে নাম তোলেন দুই জন।
এই দুজনের আগে কোনো টেস্টের পাঁচ দিনে ব্যাটিং করার কীর্তি আছে আরও ১০ জনের। তবে কোনো জুটির তা ছিল না।
প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের পাঁচ দিনেই ব্যাটিং করেন ভারতের এমএল জয়সিমা, ১৯৬০ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ভারতের হয়ে তিন জন গড়েন এই কীর্তি, যার সবগুলিই ইডেন গার্ডেন্সে। বাকি দুজন রবি শাস্ত্রী (১৯৮৪) ও চেতেশ্বর পুজারা (২০১৭)।
ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি চার জন গড়েন এই কীর্তি- জিওফ বয়কট (১৯৭৭), অ্যালান ল্যাম্ব (১৯৮৪), অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (২০০৬) ও ররি বার্নস (২০১৯)। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কিম হিউজ (১৯৮০), ওয়েস্ট ইন্ডিজের আদ্রিয়ান গ্রিফিথ (১৯৯৯) ও দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসেনের (২০১২) নাম আছে এই তালিকায়। বুলাওয়ায়ো টেস্টের প্রথম তিন ইনিংসই ঘোষণা করা হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবার, জিম্বাবুয়ে একবার। টেস্ট ইতিহাসে কোনো ম্যাচে তিন ইনিংস ঘোষণার নজির দেখা গেল এই নিয়ে স্রেফ সাত বার।
প্রথমবার এমন কিছুর দেখা মিলেছিল ১৯৬৫ সালে লাহোরে পাকিস্তান-নিউ জিল্যান্ড টেস্টে। এরপর ১৯৭৮ সালে ফয়সালাবাদে পাকিস্তান-ভারত, ২০০০ সালে ওয়েলিংটনে নিউ জিল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে, ২০০১ সালে ব্রিজবেনে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড, ২০০৮ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড ও ২০০৯ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ম্যাচ এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল।
আগের ছয় ম্যাচের সবগুলিই ড্র হয়। শেষ সেশনে নাটকীয় কিছু না হলে বুলাওয়ায়ো টেস্টও সেই পথে আছে। এই ম্যাচে বিরল ঘটনা আছে আরও। বাবা শিবনারাইন চন্দরপলের পর তার ছেলে তেজনারাইন চন্দরপলও ডাবল সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। বাবা-ছেলের দ্বিশতকের কীর্তি টেস্ট ইতিহাসে আগে ছিল কেবল একটি, পাকিস্তানের কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদ ও তার ছেলে শোয়েব মোহাম্মদের।
জন্মভুমি জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেই চতুর্থ দিন সেঞ্চুরি করেন গ্যারি ব্যালান্স। এর আগে তার চারটি টেস্ট সেঞ্চুরি আছে ইংল্যান্ডের হয়ে। দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ভিন্ন দুই দেশের হয়ে সেঞ্চুরির কীর্তি তার। ব্যালান্সের আগে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সেঞ্চুরি করে তালিকায় একাই ছিলেন কেপলার ওয়েসেলস।
জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান ব্যালান্স। তার আগে এই কীর্তি গড়েন ডেভ হটন ও হ্যামিল্টন মাসাদাকজা। কাকতালীয়ভাবে ব্যালান্সের সবশেষ দুটি টেস্ট সেঞ্চুরিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, মাঝে ব্যবধান আট বছরের। আগেরটি ছিল ২০১৫ সালে, অ্যান্টিগায় ১২২। ব্র্যাথওয়েট-চন্দরপলের সৌজন্যে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম তিনশ রানের উদ্বোধনী জুটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় বুলাওয়ায়োর এই ম্যাচে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩ | সময়: ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ