সর্বশেষ সংবাদ :

“জমে উঠেছে বানেশ্বর আমের হাট”

মোঃ মেহেদী হাসান, পুঠিয়া থেকেঃচলছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। আম ও লিচুসহ অন্যান্য ফলের ভরা মৌসুম। আর রসালো ও সুস্বাদু আমের মধ্যে স্বাদে অনন্য রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তর আমের হাট বানেশ্বর হাট। দিনভর রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি। জ্যৈষ্ঠের বৈচিত্র্যময় দিনে জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এবার আমের ক্ষতি হলেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। ফলের রাজা আমের বেচাকেনা জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তর আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটের আশপাশের সড়কগুলোতে এখন শুধুই আম আর আম। যেদিকে চোখ যাবে চোখে পড়বে আম ভর্তি ভ্যান। বাগানের কাঁচা-পাকা আম নিয়ে সব ভ্যানের গন্তব্য বানেশ্বর বাজার।

শনিবার সকালে হাটে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে উঠেছে নানা জাতের আম। খোলা আকাশের নিচে ভ্যানের ওপর সাজিয়ে আম বিক্রি করছেন কয়েকশ’ ব্যবসায়ী। সপ্তাহের সাত দিনই এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত বাজারটি। প্রচন্ড রোদের মধ্যেও কেনা-বেচায় ব্যস্ত সবাই। হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও গোপালভোগসহ নানা জাতের আম এই বাজার থেকেই রওনা দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।


রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গোপালভোগ ও বিভিন্ন ধরনের আটির আমের সঙ্গে লক্ষণভোগ বা সুখনা জাতের আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে আম চাঘীদের। এই হাটে আম বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আম বেশি উৎপাদন হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোপাল ভোগ আম সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বানেশ্বর বাজারের আশপাশে রয়েছে শতাধিকের বেশি আমের আড়ৎ। বেশ কয়েকটি আড়ৎ ঘুরে দেখা গেল, সবগুলোই ভরে উঠেছে গায়ে আঠা লেগে থাকা টাটকা আমে। বানেশ্বরের আমের আড়ৎদার রাজদুল জানান, এখন আড়তে যেসব আম আছে, তার সবই গাছপাকা। দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য একটু শক্ত থাকতেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে। এবার ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। তবে উৎপাদনে কমতি নেই বলেও জানান তিনি। ঢাকা চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। রাজশাহীর অনেক মানুষও আম কিনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন। রাজশাহীর আম এখন কুরিয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশেও যাচ্ছে।

বানেশ্বর দৌলতপুর এলাকার মনিরুল বলেন, রাজশাহীর আম এখন কুরিয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশেও যাচ্ছে। এজন্য গোপালভোগ আমের দাম বেড়ে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের আটির আম ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে । রাজশাহীতে গাছ থেকে আম নামানোর নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ২৮ মে খিরসাপাত-হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী, ২০ আগস্ট ইলমতি আম চাষিরা গাছ থেকে নামাতে পারবেন। এরইমধ্যে বাজারে লক্ষণ ভোগ আম উঠতে শুরু করেছে। দাম একটু কম। তাপরও ফলন ভালো হয়েছে। এবছর ব্যবসা ভালো হবে আশা করা যাচ্ছে। বানেশ্বর দৌলতপুর এলাকার মনিরুল বলেন, সরকার আম নামানো বা বাজারে বিক্রির সময়সূচি দেয়ায় খুব ভালো হয়েছে। কেউ কেমিক্যাল ব্যবহার করে আম পাকাতে বা জোর করে বাজারে বিক্রি করতে পারছে না। তাড়াহুড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই। সময়মত আম বাজারে আসবে। মানুষ পরিপক্ক সুস্বাদু আমই পাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।


প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২ | সময়: ২:৫৩ অপরাহ্ণ | সানশাইন