সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে গৃহবধূর মৃত্যু : পরিবার বলছে হত্যা, আত্মহত্যার মামলা নিয়েছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে শ্বশুরবাড়িতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর পর তিনি আত্মহত্যা করেছেন মর্মে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তাঁর স্বজনেরা বলছেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হত্যা মামলা করার কথা বলে সাদা কাগজে ওই গৃহবধূর মায়ের সই নেওয়া হয়। কিন্তু পরে সেই কাগজে অপমৃত্যুর এজাহার প্রিন্ট করে নেওয়া হয়।
ওই গৃহবধূর নাম তিসা খাতুন (২০)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত উজ্জ্বল আলীর মেয়ে। চার মাস আগে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার সাতবাড়িয়া এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে স্বপন আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয়। গত ১০ মে সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিসাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয়, তিসা ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তবে তিসার মা ও মামার দাবি, হাসপাতালের মর্গে তাঁরা তিসার লাশের গলায় নখ এবং আঙুলের দাগ দেখেছেন। গলা টিপে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ হত্যা মামলা না করার কারণে তিসার মা জামী বেগম রোববার রাজশাহী আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তিসার স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া এসআই মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী নগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জামী বেগম। তিনি ওই এসআইয়ের শাস্তি দাবি করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জামী বেগম বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য তিসার ওপর নির্যাতন চালাতেন স্বামী। এ জন্য ঈদের আগে তিসা বাড়ি চলে যান। গত ৫ মে তিসার স্বামী ও শাশুড়ি আর কোনো ঝামেলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্বশুরবাড়ি নিযে যান।
এরপর গত ১০ মে দুপুরে তিসার স্বামী ফোন করে জানান যে, তিসা সকাল ৯টায় আত্মহত্যা করেছে। তাঁর লাশ রামেক হাসপাতালের মর্গে আছে। খবর পেয়ে জামী বেগম হাসপাতাল মর্গে গিয়ে মেয়ের গলায় নখ ও আঙুলের দাগ পান। এ ছাড়া দুই গালে জখম ও থুতনিতে কালো কাটা দাগ দেখতে পান।
অভিযোগে বলা হয়, তখন হাসপাতালে তিসার স্বামী ও শাশুড়ি ছিলেন না। এসআই মাহাবুবুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। তারপর হত্যা মামলা করার কথা বলে তিসার মাকে মতিহার থানায় নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন।
থানা থেকে চলে যাওয়ার পর জামী জানতে পারেন, থানায় হত্যা মামলা করা হয়নি। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে এসআই মাহাবুবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন জামী বেগম।
তিসার মামা মতিউর রহমান বলেন, ‘এটা হত্যাকাণ্ড। আমিও তিসার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাসপাতালে তিসার স্বামী-শাশুড়ি ছিলেন না। তাঁদের পক্ষে আসা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এসআই মাহাবুবুর রহমান বারবার আলাপ করছিলেন। এরপর তিসার মায়ের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি তখন বলি, সাদা কাগজে সই করবে কেন? এ জন্য এসআই মাহাবুবুর আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, আমি উকিল কিনা যে, আমাকে তা জানাতে হবে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি কি মামলা করাতে পারি? একজন এসআইয়ের সেই ক্ষমতা আছে?’ এর বেশি কোনো মন্তব্য না করে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ‘জোর করে সই নেওয়া হয়নি। এটা মিথ্যা কথা। লাশের তো ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্টে যদি আসে হত্যাকাণ্ড, তাহলে হত্যা মামলা হবে। অসুবিধা নাই তো।’
জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র রফিকুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এসেছে কিনা আমার জানা নেই। যদি অভিযোগ আসে, তাহলে তদন্ত হবে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার সুযোগ নেই।’


প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৩ | সময়: ৫:১২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ