সর্বশেষ সংবাদ :

প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে  কৃষ্ণচূড়া ফুল

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি

গ্রীষ্মকালের বাহার মানে কৃষ্ণচূড়া ফুল। কৃষ্ণচূড়া এদেশে সুপরিচিত। কৃষ্ণচূড়া মধ্যম আকৃতির বৃক্ষ ও সৌন্দর্য্যপূর্ণ। এটি ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নিম্নাংশ প্রায়শ অধিমূল যুক্ত। বৈশাখের খরাদীর্ন আকাশের নিচে পত্রহীন শাখায় প্রথম মুকুল ধরার অল্পদিনের মধ্যেই সারা গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। এত উজ্জ্বল রঙ এত অক্লান্ত প্রস্ফুটন তরুরাজ্যে দুর্লভ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণবৈচিত্র্য লক্ষণীয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কৃষ্ণচূড়ার মনকাড়া দৃশ্য। সবুজ সবুজ চিকন পাতা। ফাঁকে ফাঁকে লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুল। দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডেলোনিক্স রিজিয়া’। এ গাছ চমৎকার পত্রপল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য বিখ্যাত। এটি ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি গাছ, যা গোলমোহরথ নামেও পরিচিত।

 

ভিনদেশি এ ফুলের বৃক্ষগুলো আমাদের দেশে এসে নতুন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ধারণা করা হয়, রাধা ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম রাখা হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মে যখন এই ফুল ফোটে, এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে গিয়ে তাকাতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় খুব বেশি হয় না, সর্বোচ্চ ২০ মিটার। তবে এর শাখা পল্লব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। শুষ্ক অঞ্চলে গ্ৰীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝড়ে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।

 

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণেথ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য। স্মরণ করিয়ে দেই গরম এসেছে। কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মের অতি পরিচিত ফুল। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় এসেছে। কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। পরে ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ও বাংলাদেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে।

 

এই সময়টাতে সারা দেশের মতোই চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌর এলাকার কলেজ মোড়, কলোনি মোড়, কেডিসি পাড়ার মোড়গুলোতে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, এক অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করে এ সৌন্দর্য।

 

তবে কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানে। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুল ফোটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা।

 

 

কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে পায়। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে।

 

 

উদ্ভিদের তথ্য অনুযায়ী ‘বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। যেমন- দক্ষিণ ফ্লোরিডায় জুনে, ক্যারাবিয়ানে মে থেকে সেপ্টেম্বরে, ভারতে এপ্রিল থেকে জুনে, অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে।

 

 

সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন রনি বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গোমস্তাপুর উপজেলার আনাচেকানাচে থাকা মনোমুগ্ধকর এই গাছ। ভবিষ্যতে এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় রেশি বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীদের।

 

 

রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানান, গ্রীষ্মকালে যখন কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে, তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে গিয়ে তাকাতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়ে থাকে লাল, হলুদ ও সাদা । আমাদের দেশে লাল ও হলুদ বর্নের কৃষ্ণচূড়া ফুল সচরাচর চোখে পড়ে। এ গাছগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বৃক্ষপ্রেমীদের প্রতি ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি করে এ কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২২ | সময়: ৭:১৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine