নানা অনিয়মের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাঘা উপজেলার সার্বিক অবস্থা !

নুরুজ্জামান,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় নানা অনিয়মে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে উপজেলার সাধারণ জনগন। মাদক চোরাকারবারি থেকে শুরু করে মাদক সেবি এবং উপজেলাকে ঘিরে নানা অব্যবস্থাপনা এখন অনিয়মে পরিনত হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রতি মাসে উপজেলা সভাকক্ষে আইন শৃংখলা, চোরাচালান প্রতিরোধ, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তা কার্যকারী হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

উপজেলা মাসিক সভায় অংশ গ্রহনকারী রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি এবং দু’জন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, এ উপজেলায় প্রতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় বিভিন্ন মহলের সমান্বয়ে উপজেলার আইন শৃংখলা থেকে শুরু করে পরপর গুরুত্বর্পর্ণ চারটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এসব মিটিং-এ যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বাস্তবে তার কোন প্রতিকার আমরা দেখতে পাইনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত পর-পর চারটি মিটিং-এ উল্লেখ যোগ্য কিছু বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে, দ্রব্য মূল্যের বাজার মনিটরিং, অনুমতি ছাড়া রাত-দিন সমানে বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন, মাদক নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের উদাসিনতা এবং বাঘা থানায় প্রতিমাসে এক-দুইটা মামলা হলেও উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমান সীমিত এবং সেটি পরিত্যাক্ত উদ্ধার দেখানো , পরিবহনে চাঁদাবাজী, চিনি মিশৃত ভেজাল আখ এবং খেজুরের গুড় তৈরী, গোপনে বাল্য বিয়ে সম্পন্য, সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ- রাস্তা, ড্রেন, ব্রীজ ইত্যাদি কাজে ব্যাপক অনিয়ন, সীমান্ত এলাকায় কিশোরদের দ্বারা দামি মোটর সাইকেল চড়ে সো ডাউন এবং মাদক সেবন, বিভিন্ন হাট এবং নদীতে খেয়া পারা-পারে ইজারার নামে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের নিকট থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়।

এ ছাড়াও উপজেলা সবরেজিষ্ট্রি অফিস থেকে জমি ক্রেতাদের নিকট থেকে সরকারি মূল্যের বাইরে এক লক্ষ টাকার দলিলমূলে জোর পূর্বক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ আদায়, কালো বাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রী, রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া শত-শত যানবাহনের অবাদ চলাচল, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মিষ্টি এবং খাবার হোটের চালু , অপর দিকে কাগজ পত্র বিহীন বাঘায় চলছে প্রায় অর্ধ শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগোনিষ্টক সেন্টার, মাজারে আসা দর্শনার্থীদের পরিবহন থেকে চলছে টোল আদায়, বিভিন্ন এনজিও মালিক এবং রাতা-রাতি কলাগাছ বনে যাওয়া এলাকার ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের মাধ্যমে ফাঁকা ষ্ট্রাম্প এবং চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে চলছে লাখ-লাখ টাকা সুদের ব্যবসা।

এমন ও লক্ষ করা গেছে, মাদক সেবী ও হেরোইন খোরদের অত্যাচারে ইরি-বোর ক্ষেত থেকে শ্যালো ম্যাশিন এবং গ্রামের মধ্যে থেকে টিউবয়েলের বডি ও হ্যান্ডেল চুরি হচ্ছে অনায়েসে । এ ছাড়াও স্কুলে-স্কুলে চলছে পাইভেট এবং কোচিং বানিজ্য, বালি না ঢাকার কারনে চলন্ত ট্রাক থেকে পরিবেশ দূষন হচ্ছে। চলছে চায়ের দোকান গুলোতে টিভি দেখার আসর এবং ক্যারাম ও টাস খেলার নামে জুয়ার আড্ডা , এ ছাড়াও রয়েছে ইমো এবং বিকাশ হ্যাকার এর একটি বড় চক্র , সর্বপরি বিভিন্ন পন্য বিক্রীতে মূল্য ছাড় এবং সকল রোগের চিকিৎসা ও বিশাল গরুর মাংস ক্রেতা ভাইদের জন্য সু-খবর সহ প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত মাইকিং এর শব্দে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে অত্র অঞ্চলের সর্ব স্তরের মানুষ। বিশেষ করে রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি, তাদের সন্তানরা ঠিক মতো পড়া-লেখা করতে পারছে না।

বাঘার সুনাম ধন্য কাপড় বিক্রেতা কামরুল ইসলাম ও সমাজ সেবক খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, উন্নত দেশে মাইক চোখে পড়েনা। সেখানে গাড়ি চলা-চলের জন্য গতি এবং শব্দ নিয়ন্ত্রন ঠিক আছে-কিনা , সেটি দেখার জন্য উন্নত মেশিন রয়েছে। এটি দেখভাল করেন ঐ দেশের আইন শৃংখলা বাহিনী। এ দিক থেকে আমাদের দেশে অনেক বিষয়ে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।

বাঘার ভুক্তভুগী সাবেক উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মাসুদ লতা বলেন, এ বছর ঈদের আগে আমার বোন সকালে ঈশ্বরদী থেকে আমার মোবাইল নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করে। আমি দুপুরে এই টাকা বের করার জন্য নারায়নপুর বাজারের একটি বিকাশের দোকানে আসি। এ সময় দোকানদার আমার টাকা বের করতে গিয়ে জানায় এক ঘন্টা পূর্বে আমার টাকা হ্যাক করে বের করে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্ত অদ্যাবধি কোন প্রতিকার পাইনি।

এসব বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা উপজেলা আইন শৃংখলা, চোরাচালান প্রতিরোধ, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন শীর্ষক সভায় নানা বিষয়ে আলোচনা উঠে আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখানে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ অনেক, সে তুলনায় লোকবল সংকট। তার পরেও আমি বিষয় গুলো পর্যায়ক্রমে দেখার চেষ্টা করছি।

বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, এই মিটিং এর সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এখানে যারা উপস্থিত থাকেন, তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবে যে সকল বিষয় আলোচনায় উঠে আসে, তার আংশিক বাস্তবায়ন হলেও নানা প্রতিকুলতার কারনে সবগুলো বাস্তবায়ন করা হয়তো সম্ভয় হয়ে উঠেনা।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মাদকের সাথে পুলিশের কোন আপোশ নেই। অন্যান্য বিষয়ে অত্র মিটিং এর সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তথা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আমার কাছে পুলিশী সহায়তা চাইলে, আমি সেটি দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। তবে কিছু বিষয়ে স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। বিষয় গুলোতে আন্তরিক হতে হবে।


প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২ | সময়: ৪:৩০ অপরাহ্ণ | সানশাইন

আরও খবর