বগুড়া শেরপুরে কেঁচো সার তৈরী করে মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা 

মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি,’কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’ এই প্রবাদ আমরা সকলেই জানি তবে কেঁচো নাড়াচারা করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার জীবন সংগামী নারী রেশমা।
তিনি এখন কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সুপাড়ি, পেপে ও সবজির আবাদ ছাড়াও শুধু কেঁচো কম্পোস্ট থেকেই প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। রেশমা শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের বোংগা গ্রামের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হুসনেয়ারা বেগমের মেয়ে।
রেশমার সাথে কথা বলে জানা যায় তার সংগ্রামী জীবনের কথা। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা রেশমার। বাবা মায়ের মধ্যে সম্পর্কটাও ভাল ছিলনা। রেশমার যখন ২ মাস বয়স তখন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ৫ বছর বয়সী রেশমাকে নিয়ে তার মা বাবার বাড়ি চলে আসেন।
সংসার পরিচালনার তাগিদে রেশমার মা হুসনেয়ারা বেগম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ১৫০০ টাকা বেতনে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন। তার বাবা তাদের কোন খবর রাখতেন না। এমনকি রেশমার কোন দায়িত্বও নেয়নি তিনি। তাই মায়ের কাছেই বেড়ে উঠে সে।
অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৫ বছর বয়সের তার বিয়ে হয়। ভাগ্যক্রমে তার স্বামী হয় মাদকসেবী ও জুয়ারু। জুয়া খেলার টাকার জন্য অমানসিক নির্যাতন চালাতো রেশমার উপর। বাধ্য হয়েই স্বামীকে তালাক দিয়ে মায়ের কাছে চলে আসে সে। এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রেশমার সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। ধৈর্য এবং সততার সঙ্গে নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় এখন সেই দিন পাল্টে গেছে তার। বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রির মাধ্যমে রেশমা নিজেই নিজের সংসার গড়িয়েছেন।
সখের বসে ২০১৬ সালে দুইটি গরু পালন করেন তিনি। সেই গরুর মল কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে রেশমা। পরে ২০১৭ সালে মাত্র একটি সিমেন্টের চাকে কেঁচো দিয়ে শুরু করেন জীবনযুদ্ধের পথচলা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার ১৩৫ টি চাক ও ৩০ টি ক্যারেটে কেঁচো রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা আয় করেন রেশমা। সেই টাকা ছাড়াও সুপাড়ি, পেপে বিভিন্ন সবজির চাষ ও গরু লালন পালন করে এখন ভালোই চলছে তার সংসার। উদ্যোক্তা সুরাইয়া ফারহানা রেশমা জানান, বাবার অভাবের সংসার থেকে স্বামীর সংসার পর্যন্ত কখনও অভাব পিছু ছাড়েনি। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পরে ভাবলাম নিজেই উদ্যোক্তা উন্নয়নের কোনো কাজ করবো। যা দিয়ে নিজের গতি ফেরানো যাবে। এ ভাবনা অনুসারেই সুযোগ পেয়ে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিই।
এরপর নিজ বাড়িতেই শুরু করি কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ। রাসায়নিক সার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাসায়নিক সার জমিতে মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। তাই আমি যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী থেকে প্রশিক্ষন গ্রহন করে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো সার তৈরী করে বিক্রি করছি। এই সারের ফসল আমি নিজেও খাচ্ছি এবং অন্যদেরও খাওয়ানের চেষ্টা করছি। এই কাজে আমি সরকারের পাশাপাশি সর্ব সাধারণের সহযোগিতা কামনা করছি।
শেরপুর উপজেলা মহিলা বিষযক কর্মকর্তা সুবির কুমার পাল জানান, আমি সুরাইয়া ফারহানা রেশমার কৃষি ও কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন পদ্ধতি নিজে দেখেছি। একজন সংগ্রামী মেয়ের চেষ্টায় শূন্য থেকে সফলতা অর্জন দেশের কৃষক ও কৃষাণীদের জন্য অনুকরণীয়। যখন দেশের অগণিত কৃষক কৃষি কাজে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে তখন রেশমা  জৈব সার তৈরী এবং জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ সবাইকে চমকে দিয়েছে।

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ | সময়: ১:১৫ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ