সর্বশেষ সংবাদ :

চালু হয়নি সুগারমিলের বর্জ্য শোধনাগার দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

সানশাইন ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তরল বর্জ্য পদার্থ শোধন করার লক্ষে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। কিন্তু চিনিকলটিতে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই চললেও নানা কারণে শোধনাগারটি এখনো চালু করা হয়নি। ফলে পরিবেশ দূষণ রক্ষায় কোনো কাজে আসছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শোধনাগারটি।
অথচ নবনির্মিত শোধনাগারের পাশ দিয়েই অপরিশোধিত বর্জ্য একটি নর্দমার মাধ্যমে বের হয়ে নদীতে গিয়ে মিশছে। এই কারণে নদীর পানির রঙ কালচে আকার ধারণ করছে। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে নদীর পানি। এছাড়া জটিল সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে চিনি কলের বর্জ্য শোধনাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড টাঙ্গানো রয়েছে। সেখানকার তথ্যমতে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) প্রকল্প ২০২০ সালের ৩০ জুন মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে। কোড নাম্বার-২২৪২৫৯৩০০। আর এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৫১০. ৩১ লাখ টাকা। গড় হিসেবে দেখা যায় ঠাকুরগাঁওয় চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার টাকা।
ঠাকুরগাঁওয়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত শুক নদী পাড়ের বাসিন্দা মাহাবুব আল হাসান বাদল বলেন, ‘চিনিকলের সব তরল বর্জ্য শুক নদীর পানিতে মিশছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়া পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’ স্থানীয় জেলে খাজির উদ্দীন মিয়া বলেন, ‘সুগারমিলের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানির কারণে নদীতে নেমে মাছ শিকার করা যায়না। শরীর চুলকায়। এতে করে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমরা। বেঁচে থাকার তাগিদে তাই জেনে বুঝেই পানিতে নামতে হয়। এ সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’
কাপড় ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘মারাত্মক ঢিলেঢালাভাবে চলছে জেলার একমাত্র এই ভারি প্রতিষ্ঠানটি। তা না হলে এতো দুর্ভোগ সৃষ্টি হতোনা। চিনিকলের ছাই ও দুর্গন্ধ যুক্ত তরল বর্জ্য পদার্থ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সরকার এতো টাকা খরচ করে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করেও কোনো লাভ হয়নি। আমি বুঝতে পারছিনা বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণ হওয়ার পরেও কেন চালু হয়নি?’
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও চিনিকল থেকে ৮-১০ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য নির্গত হয়। বর্জ্য শোধনাগারটি চালু না হওয়ায় যে শুধু পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তা নয়, মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া শোধনাগারটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। স্কুলের প্রাথমিকের ছেলে-মেয়েরা সেখানে গিয়ে দৌঁড়ঝাপ করছে। যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিবেশের দূষণ রক্ষায় এটা চালু হওয়াটা যেমন জরুরি, তেমন জরুরি এখানে নিরাপত্তা দেওয়া। কারণ শোধনাগারটি একদম উন্মুক্ত। চারপাশে কোন প্রাচীর নেই।’
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে বর্জ্য শোধনাগারটি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়েছি।’ চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের কাজটি করা হয়েছে। এটি এখনো চিনিকলের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এবং উদ্বোধনও করা হয়নি। অহেতুক যাতে কেউ শোধনাগারটিতে যেতে না পারে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নেব।’


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ | সময়: ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ