বাঘায় তিন ইউপিতে নির্বাচন, টাকার কাছে পরাজিত হচ্ছে সততা !

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : ইউনিয়ন নির্বাচনের জোয়ারে কাঁপছে দেশ। অনেকগুলি জেলায় নির্বাচন শেষ হওয়ায় কেউ হেসেছেন বিজয়ের মালা পরে। আবার অনেকেই পরাজিত হয়ে কষ্টে কাতর হয়েছেন। তবে ভোটারদের উক্তি, নির্বাচনের পর মেম্বর-চেয়ারম্যানদের টাকা না দিলে কোন কাজ হয়না। তাই নির্বাচনের পূর্বে যে প্রার্থী বেশি টাকা দিবেন, ভোটের দিন তিনিই জয়ের মালা পরবেন।

এ প্রসঙ্গে সুধীজনদের উক্তি, আমাদের দেশে পার্লামেন্ট, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন-সহ যে কোন নির্বাচন এলেই ভোটারদের গায়ে অত্যান্ত চাতুরতার সাথে খাটি সরিষার তেল মারা শুরু হয়। সালাম বিনিময়তো আছেই, তার সাথে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি এবং প্রার্থীরা নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে জনগনকে সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর যখন ভোট শুরু হয়, তখন চলে কালো টাকা সিটানোর প্রক্রিয়া।

বর্তমানে রাজশাহীর জেলার কয়েকটি উপজেলায় চতুর্থ দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামি ২৬ ডিসেম্বর। এদিক থেকে বাঘা উপজেলার আড়ানী, বাউসা এবং চকরাজাপুর ইউনিয়নে দলীয়-বিদ্রোহী এবং সতন্ত্র মিলে  ৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রচার প্রচারনায় সরব হয়ে উঠেছেন । ইতোমধ্যে একটি সাংঘর্ষিক মামলায় দল থেকে বহিস্কৃত বাউসা ইউনিয়ন আ’লীগের বিপুল সম্পদশালী বিদ্রোহী প্রার্থী নুর মোহাম্মদ তুফান কারাগারে অবস্থান করলেও বিএনপি এবং আ’লীগের একটি অংশ তার পরিবারকে ভোটের মাঠে চাঙ্গা করে রেখেছেন। এ জন্য তারা নিচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা।

তবে বিশ্বস্ত কতিপয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষ করে সতন্ত্র হয়ে বাউসা ইউনিয়নে ভোট করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন পালাশ। তার প্রতিকের বাইরে ভোট দিবেনা জামাত-বিএনপি জোট। কতিপয় বিএনপি আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী ঐ পরিবারের সাথে গা ভাসিয়ে তাদের চাঙ্গা করে রাখলেও ভোটের দিন আ’লীগ দলীয় নৌকার মাঝি শফিকুর রহমানের সাথে তার চলবে হাড্ডা-হাড্ডি লড়ায়।

অপর দিকে আড়ানী ইউনিয়নে আ’লীগের দলীয় প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জনসমর্থনে এগিয়ে থাকলেও সেখোনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন তার দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী এবং জামাতে ইসলামীর মাধ্যমে পুরো দমে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন।এখানে স্থানীয় লোকজন বলছেন, রফিক একজন কলেজ প্রভাষক এবং সাংস্কৃতিমনা মানুষ। অত্র ইউনিয়নে তাঁর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখানে তার পাশ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এদিকে উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে গত বছর আ’লীগ বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত চলমান ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযমকে এবারও দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার বিপরিতে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন গতবছর পরাজিত বাবলু দেওয়ান। তিনি এবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার সর্তে দু’জন স্কুল শিক্ষক জানান, এই ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় একজন প্রার্থী দুলাল হোসেন এর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় তার লোকজন বিদ্রোহীর প্রার্থীকে ভোট দিবেন বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, চলমান চেয়ারম্যান একজন ধনী মানুষ। তিনি ভোটে জয়-যুক্ত হবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সার্বিক বিষয়ে এলাকার অভজ্ঞি মহলরে বক্তব্য, টাকার কাছে পৃথিবীর সব কিছু পরাজিত। যে সকল প্রার্থী জনগণের সেবা দেয়ার জন্য নির্বাচনে দাড়িয়েছেন তারা কোন ভোটারকে টাকা অফার করবে না। আর যারা করবে, তারা ভোটের পরদিন ঐ ভোটারকে আর চিনতে পারবে না। এ সমস্ত প্রার্থী দিয়ে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। সুতারাং জেনে-বুঝে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করা প্রত্যকে নাগরকিরে দায়ত্বি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২১ | সময়: ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ