সর্বশেষ সংবাদ :

সান্তাহারে অগ্নিকান্ডে নিহত ৫ লাশের পরিচয় শনাক্ত

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি :
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকায় বিআইআরএস নামে ওয়ানটাইম প্লেট-গ্লাস তৈরীর প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নীকান্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে নিহত ৫ শ্রমিকের লাশের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে এবং তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার স্বজনরা নিজে থেকেই লাশ সনাক্ত করার পর ওইদিন দুপরেই নিহতদের লাশ হস্তান্তর করে আদমদিঘী থানা পুলিশ। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই নিজ নিজ গ্রামে নিহত ৫ শ্রমিকের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। এদিকে লাশ নিয়ে গ্রামে ফেরার পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সুষ্ঠি হয়। প্রতিটি পরিবারের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। চলে শোকের মাতম।

এদিকে পরিচয় শনাক্ত হওয়া নিহত ৫ শ্রমিক হলেন সান্তাহার পৌর শহরের ঘোড়াঘাট মহল্লার মৃত আফসার উদ্দিন শাহ’র ছেলে আব্দুল খালেক শাহ(৫০),কোমল দোগাছি মহল্লার লুৎফর রহমানের ছেলে শিশু শ্রমিক শিহাব(১৩), সান্তাহার শহরকোলের সান্দিড়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান আলী(২৮), ছাতনী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান তালুকদারের ছেলে বেলাল হোসেন তালুকদার(৫৫) এবং উপজেলার পাহালোয়ানপাড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে শিশু শ্রমিক ইমন(১৫)।

এঘটনায় আদমদীঘি থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিহাব এবং ইমন নামের দুই শিশু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শিশুশ্রম আইনে মামলা করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্য জালাল উদ্দিন বলেন, ইউডি মামলার মধ্যেই রয়েছে ওই ২ জন। আলাদা মামলা করার সুযোগ এই মুহুর্তে নেই। তাছাড়া শিশু শ্রম আইনে মামলার করা না করার বিষয়টি শ্রম বিভাগের।

বুধবার সরেজমিন মৃত ওই ৫ জনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। একে অপরকে জড়াজড়ি করে কান্নার রোল পড়ে গেছে। কোন সান্তনাতেই থামসে না তাদের আহাজরি।

নিহতদের মধ্যে শিশু শ্রমিক শিহাব তারা ৪ ভাই বোন। এর মধ্যে শুধু শিহাব-ই ছিল সুস্থ -স্বাভাবিক। অপর ৩ ভাই-বোন শারিরীক প্রতিবন্ধি। তার বাবা লুৎফর রহমান চাতাল শ্রমিক। অপর শিশু শ্রমিক ইমন তার এক বোনকে নিয়ে বাবার সাথে বসবাস করে আসছিল। তার মা স্বামী পরিত্যক্তা। এদিকে, কারখানা মালিক পক্ষ নিহতদের দাফন-কাফন বাবদ প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি কোন আর্থিক সহায়তা এখনো মেলেনি বলে জানা গেছে।

আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, নিহতের স্বজনদের দেওয়া বর্ননা মতে লাশ সনাক্ত হওয়ায় আর নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষার আর প্রয়োজন পড়েনি।

এদিকে কারখানায় অগ্নীকান্ডের প্রকৃত কারন এবং এতগুলো শ্রমিক মারা যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নিদের্শ দিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক। কমিটিতে আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসার,ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একজন করে সদস্য রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে সান্তাহার পৌর মেয়র আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু, ইসমাঈল হোসেন, জিয়াউল নাছিম রাঙ্গা ও মনোয়ার হোসেন এই চারজনের যৌথ মালিকানায় ওই কারখানাটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। কারখানাটিতে দুই শিফটটে ৭২ জন শ্রমিক কর্মচারী কাজ করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি সহকারী শ্রমিক হিসেবে বেশ কিছু শিশু শ্রমিকও ওই কারখানায় কাজ করতেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সান্তাহারে বিআইআরএস প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখান থেকে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ৫ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মালিক পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

সানশাইন/ শামি


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ | সময়: ৮:০৪ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ