রাজশাহীতে বনসাই প্রদর্শনী বৃহৎ বৃক্ষের শৈল্পিক নান্দনিকতা

স্টাফ রিপোর্টার : মহামারী করোনার কারনে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর আবারো রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বনসাই প্রদর্শণী। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ প্রদর্শনী শুরু হলেও শুক্রবার ছুটির দিনের সকাল থেকেই জমে উঠেছে প্রদর্শণী প্রাঙ্গণ।
রাজশাহী নগর ববনের গ্রীণ প্লাজায় এবার বসেছে টবে প্রাচীন সব বৃহৎ বৃক্ষের শৈল্পিক সমারোহ। শুক্রবার সকালে নগর ভবনের গ্রীণপ্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, টবে বসানো আস্ত আস্ত সবুজ গাছের খর্বাকৃতি রূপ। বাংলাবট, লাইকড়, তেঁতুল, কামীনি প্রভৃতি সব গাছের সমারোহ। এ যেন শিল্পীর ছোয়ায় একেকটি নান্দনিক বৃক্ষের সমাহার।
তিন দিনব্যাপী শুরু হওয়া এ বনসাই প্রদর্শনীতে ভীড় লেগেছে বৃক্ষ ও প্রকৃতি প্রেমিদের। রাজশাহী বনসাই সোসাইটির আয়োজনে এবার ২১ তম এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে স্থানীয় ৫০ জন বনসাই শিল্পীর তৈরী চার শতাধিক বনসাই। শুক্রবার ছুটির দিনে বনসাই প্রেমিরা ভীড় করেন, রাজশাহীর নগর ভবনের গ্রীণ প্লাজায়।
আয়োজকরা জানান, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম বনসাই চর্চার। হাজার বছর থেকে চলে আসছে বনসাই চর্চা। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এর পরিধি, সৌন্দর্য্য আর আধুনিকতা। সবমিলিয়ে বনসাই চর্চা এখন আধুুনিক ও মননশীল শিল্পে পরিনত হয়েছে। এর নান্দনিকতা তৃপ্তি যোগায় মনে।
তারা জানান, এবারের প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশী প্রায় ৪৫ প্রজাতির বনসাইয়ের মধ্যে রয়েছে কামিনী, জিলাপি, চাইনিজ বট, পাইকড়, বট, তেঁতুল, শেওড়া, বাংলা বট, ঝুমুর, ডুমুর, থাই চেরি, সেফিলেরা, কৃষ্ণচূড়া, ফাইকাস, ফুকেনটি, বাগানবিলাস, লাইকড়, ফুকেট টি, বৈচি, কদবেল, পেন্টাস, বেনজামিন, রেটুসা, রামফি, গোল্ডেন, ভাইরেন্স, বাওবাব, জেড, ফাইকাস লংআইল্যান্ড, থাইচেরী, রঙ্গন, ছাতিমসহ নানারকম বনসাই।
রাজশাহী বনসাই সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ ইসরার আলী বলেন, গত দু বছর কারনোর কারনে প্রদর্শণী হয়নি। তিনি বলেন, বনসাই হলো জীবন্ত শিল্প। সারা পৃথিবীতে এর প্রসার ঘটেছে। আমাদের দেশে বনসাইয়ের প্রসার ঘটাতে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, শুধু শিল্প নয়, বানিজ্যিকভাবেও এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বর্তমানে এটা থেকে কিছুটা আয় করতে শুরু করেছে। এটার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গাছ সম্পর্কে জানতে পারবে। বর্তমানে যে ফ্ল্যাট ট্র্যাডিশন শুরু হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে সবুজের ছোঁয়া ও অক্সিজেন পেতে বনসাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি জানান, সারাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ বনসাই রাজশাহী বনসাই সোসাইটি সরবরাহ করে থাকে। এ শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সদস্যরা। এর বাইরেও বনসাই সম্পর্কে মানুষকে আগ্রহী করতে ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করা হয় বলে জানান এই বনসাই শিল্পী।
শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই বনসাই দেখতে মানুষের স্রোত নামে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক সচিব আবু মো. মোস্তফ কামাল এ প্রর্দণীর উদ্বোধন করেন। এসময় রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানসহ রাজশাহীর বনসাই প্রেমিরা উপস্থিত ছিলেন। আজ শনিবার রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শণী।
রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, বনসাই একটি জীবন্ত শিল্প। উদ্ভিদ সংরক্ষণে একটি অভিনব কায়দা। এর মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষকে সংরক্ষণ করা যায়। তাই এই শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। আয়োজকরা বলেন, একটি জীবন্ত শিল্পকে টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টকর হলেও জীবন্ত শিল্পকে ধরে রাখার জন্য শ্রম ও ভালোবাসার মধ্যে গড়ে তোলায় হলো বনসাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আস্ত একটি বটগাছ টবে আটকানো, বড় ধরনের তেতুলগাছ স্থান পেয়েছে ছোট্ট টবে। বনসাই প্রেমিদের মতে ‘প্রকৃতি তার বিচিত্র রূপ নিয়ে সর্বদা আকর্ষণ করে, সেই প্রকৃতির পুরো রহস্যটায় পাওয়া যায় একটি জীবন্ত বনসাইয়ের মাধ্যমে। বনসাই এমনই এক শিল্পকর্ম যার সৌন্দর্য্য প্রকৃতির সঙ্গে একই সীমারেখায় মিশিয়ে দিতে সক্ষম।
উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতেও এখন গড়ে উঠেছে এ শিল্পকর্ম নিয়ে চর্চাকেন্দ্র। রাজশাহী বনসাই সোসাইটি এ জীবন্ত শিল্প ধরে রাখতে আর চর্চার পরিধি বাড়াতে আয়োজন করছে নানাভাবে। নিচ্ছে নানা উদ্যোগ। ২০ বছর ধরে রাজশাহী বনসাই সোসাইটি এগিয়ে চলেছে তাদের চিত্রকর্ম নিয়ে।
রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ মাহফুজ-ই-তৌহিদ টুটু জানান, বনসাই’র মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বৃহৎ গাছকে ক্ষুদ্র আকারে দেখানো সম্ভব হয়। এ নান্দনিক শিল্প মানুষকে তৃপ্তি দেয়। এর মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করা যায়। বনসাই’র অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২২ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ