রাজশাহীতে আড়াইশ’ অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক

রাজু আহমেদ: আজ শেষ হচ্ছে অবৈধ ভাবে পরিচালিত বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টক সেন্টারগুকে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম। তবে রাজশাহীর বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দাবি তারা স্বাস্থ্য বিভাগে আবেদন করেও সময় মতো লাইসেন্স পায়নি। এজন্য তারা স্থানীয় সিভিল সার্জন অফিসকেই দায়ি করছেন। আর যারা লাইসেন্স পেয়েছেন তারা নিজের তাগিদ থেকে উৎকোচ দিয়ে হলেও লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। এদিকে রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলার অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগন্সিটকগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, আজ থেকেই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইড থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, রাজশাহী জেলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৬২ টি এবং ক্লিনিকের সংখ্যা ৮৭ টি। তবে এর সবগুলোর লাইসেন্স নবায়ন নেই। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের এই হিসেবের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী মহানগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী জানান, রাজশাহীতে শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে সর্বোচ্চ ৫ জন। যার নিয়েছেন তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে লাইসেন্স নিয়েছেন। এজন্য তারা ঢাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করে কম্পিউটার অপারেটরদের উৎকোচ দিয়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নিতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে হয়। সেকারণে অনেকে বাধ্য হচ্ছে উৎকোচের বিনিময়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে।
এদিকে রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ম মেনে নির্ধারিত ফি প্রদান করে অনলাইনে আবদনের পর বছর পেরিয়ে গেলেও, তাদের লাইসেন্স তো দূরের কথা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনেই আসেনি স্থানীয় সিভিল সার্জন বিভাগ। লক্ষিপুর ডায়াগনস্টিক নামের প্রতিষ্ঠানটি তাদের মধ্যে অন্যতম। ৭ মাস আগে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে ওই প্রতিষ্ঠানটি পরির্দশনের জন্য বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত তা পরিদর্শন করেনি জেলা সিভিল সার্জন। আবার এমনও প্রতিষ্ঠান আছে যাদের প্রতিষ্ঠান এক থেকে দেড় বছর আগে পরিদর্শন করেছে স্থানীয় সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শনের পরে তার প্রতিবেদন আর ঢাকায় পাঠান হয়নি।
রাজশাহীর প্রাইভেট ক্লিনিক এ্যন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মকলেসুর রহমান বলেন, সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই ভালো খারাপ আছে। তবে আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চাই। অনলাইনে আবেদনের নিয়ম চালুর পর বলা হয়, প্রাইভেট ক্লিনিক এ্যন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবেদনের পর ১৪ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য বলবে। নির্দেশনা পাবার পর সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রদান করবে স্বাস্থ্য বিভাগে। তবে ঠিক এভাবে কাজ হচ্ছে না। প্রাইভেট ক্লিনিক এ্যন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিচ্ছে, জনগণকে সেবা দিচ্ছে। বৈধ ভাবে ব্যবসা করার জন্যই আমরা সব নিয়ম মানছি। এখন দায়িত্বটা কার! কারা অবহেলা করছে? আমাদেরকে তো বলা হয়নি তোমার আবেদন গ্রহণ করা হয়নি বা তোমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করো। এসব বিষয়গে আমরা রাজশাহী সিভিল সার্জন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করবো। আমাদের স্পষ্ট কথা আমরা বৈধ ভাবে ব্যবসা করতে চাই।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহীতে অবস্থিত অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। রবিবার ওই সব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে দেয়া হবে। তবে এধরণের ঠিক কতগুলো অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে তার সংখ্যা সানাতে পারেননি সিভিল সার্জন।
যারা আবেদন করেছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হলেও যারা রিনিউ করেনি তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ডিজি হেলথ অফিসে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার করা হবে। সেখান থেকে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এখন কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, যাদের কোন রেজিস্ট্রেশন নাই শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২২ | সময়: ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ