সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহী বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা পেল প্রায় ৭ লাখ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে রাজশাহীসহ সারাদেশে একযোগে প্রথম ডোজ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে একদিনে ১৮৬৯ টি কেন্দ্রে প্রথম ডোজ টিকা পেল প্রায় ৭ লাখ মানুষ। সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আগ্রহী নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সবাই মুখে মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন।
এই কার্যক্রম সফল করতে শনিবার গোদাগাড়ী উপজেলার তিনটি টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি। তিনি টিকা প্রদান কেন্দ্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখেন। তিনি টিকা গ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্যাম্পেইন সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। উল্লেখ্য, গোদাগাড়ী উপজেলার টিকা কেন্দ্র তিনটি হলো, দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের টিকা কেন্দ্র, সোনাদিঘী হাইস্কুল টিকা কেন্দ্র ও গোদাগাড়ী পৌরসভা টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হকসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
টিকা কেন্দ্র পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী বিভাগে ১৮৬৯ টি কেন্দ্রে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ জনকে টিকা প্রদান করা হবে। সেই লক্ষ্যে করোনা প্রতিরোধের জন্য গণহারে প্রথম ডোজ টিকাদান ক্যাম্পেইন চলছে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবার টিকা নিতে হবে। টিকা নিতে টাকা লাগে না, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং পরিবার ও দেশের মানুষ সুরক্ষিত থাকে। আগে টিকা নিতে অনেক কাগজপত্র দেখাতে হতো। এখন নিবন্ধন ছাড়াই শুধুমাত্র একটা ফোন নাম্বার থাকলেই টিকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
উপস্থিত টিকা গ্রহিতাদের উদ্দেশ্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহীর শতভাগ নাগরিককে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনা হবে। কোনো নাগরিক প্রথম ডোজ টিকা নিতে বাকি থাকবে না। আশা করি, আমরা করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো। করোনা থেকে মুক্তি পেতে টিকা গ্রহণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই, নাগরিকরা সেটি বুঝতে পেরেছেন। এজন্য টিকা নিতে মানুষের আগ্রহও অনেক বেড়েছে।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ উল্লেখ পূর্বক বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। তাই করোনা টিকাদান কার্যক্রমকে সফল করার স্বার্থে সব বিভ্রান্তিকে দূরে রেখে প্রচার ও নিবন্ধন কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
টিকা কেন্দ্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের পূর্বাভিজ্ঞতা রয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা প্রদান কার্যক্রমে নিয়োজিত। প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে দুজন স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে তিনজন স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যেক কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, রাজশাহীর নয় উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নেই প্রথম ডোজ গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি করে বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে। রাজশাহী জেলায় একদিনে ৩১৩টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৩ হাজার ৪০০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে, যেনো কেউ প্রথম ডোজ টিকা না নিয়ে ফিরে না যান। কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই কেন্দ্রগুলোতে টিকা পাওয়া যাচ্ছে। টিকা শেষে টিকা গ্রহিতাকে টিকার সনদও প্রদান করা হচ্ছে। শতভাগ টিকাদান নিশ্চিত করতে, ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী বিভাগের সকল উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের সকল ওয়ার্ডে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা নিতে এসে আনন্দ প্রকাশ করেছেন টিকা গ্রহীতারা। বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রম চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তারা। উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ টিকা নিয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ | সময়: ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ