সর্বশেষ সংবাদ :

পারিশ্রমিক নিয়ে ‘মিথ্যাচারের অভিযোগ’ তুলে পিএসএল ছাড়লেন ফকনার

স্পোর্টস ডেস্ক: চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ তুলে মাঝপথে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ছেড়ে গেছেন জেমস ফকনার। সরাসরি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে দোষারোপ করে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার বলেছেন, তার চুক্তিকে সম্মান করা হয়নি। বরং তার সঙ্গে ক্রমাগত ‘মিথ্যাচার’ করে গেছে পিসিবি।
পিসিবি ও ফকনারের দল কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স যদিও তার অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তা অস্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে তাকে আর পিএসএলের ড্রাফটে রাখা হবে না বলেও জানিয়েছে পিসিবি। ৩১ বছর বয়সী ফকনার কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের সবশেষ তিন ম্যাচে খেলেননি। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে পারিশ্রমিকের বিষয়টি নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এবং পিসিবির সঙ্গে তার আলোচনা চলছিল। শুক্রবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, পিসিবি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার পর ফকনার হোটেলের লবির বারান্দা থেকে তার ব্যাট ও হেলমেট একটি ঝাড়বাতির ওপর ছুড়ে মারেন। এরপর বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
পরদিন ফকনার টুইটারে তুলে ধরেন পারিশ্রমিক নিয়ে ঝামেলার বিষয়টি। তার প্রতি পিসিবি ও পিএসএলের আচরণকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেন তিনি। একই সঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করেন পাকিস্তান ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে। “পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শেষ দুই ম্যাচ থেকে আমাকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। আমার পারিশ্রমিকের ব্যাপারে যে চুক্তি হয়েছিল পিসিবি তা সম্মান করেনি। আমি পুরো আসর খেলার জন্যই এসেছিলাম। কিন্তু তারা ক্রমাগত মিথ্যা বলে গেছে।”
“ছেড়ে আসতে কষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আমি। দেশটিতে অনেক তরুণ প্রতিভা আছে, সমর্থকরাও দারুণ। কিন্তু পিসিবি ও পিএসএল থেকে আমি যে আচরণ পেয়েছি, তা খুবই হতাশার। আমি নিশ্চিত, সবাই আমার অবস্থান বুঝতে পেরেছেন।” পিসিবি ও কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স পরে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে ফকনারের আচরণকে ‘নিন্দনীয়’ উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফকনারের এজেন্ট প্রথমে অর্থ প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ পাঠিয়েছিল। কিন্তু পরে তার পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ পাঠানো হয়। তবে তার আগেই ফকনারসহ অন্য খেলোয়াড়দের বকেয়া অর্থের ৭০ শতাংশ পরিশোধ করা হয়েছিল।
তার এজেন্টের দেওয়া প্রথম ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো অর্থ ফেরত না আসা পর্যন্ত নতুন করে আবার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব নয়, ফকনারকে পিসিবি এমনটাই বলেছিল বলে জানতে পেরেছে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ ফকনারকে দেওয়া হয়েছে কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পিসিবির মতে, ফকনার তার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন এবং বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করবে।
“পাকিস্তান সুপার লিগের সাত বছরে কোনো খেলোয়াড় কখনও পিসিবির দ্বারা চুক্তি পূরণ না হওয়ার কোনো অভিযোগ করেননি। তার (প্রথম) অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান এবং তা পাওয়া সত্ত্বেও ফকনার অস্ট্রেলিয়ায় তার অ্যাকাউন্টে একই পরিমাণে দ্বিতীয়বার অর্থ প্রদানের জন্য জোর দিয়েছিলেন। এর মানে ফকনারকে দুইবার অর্থ প্রদান করা হতো। এরপর তিনি হুমকি দেন এবং অর্থের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শুক্রবার বিকেলে মুলতান সুলতানসের বিপক্ষে তার দলের ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানান।”
“পিসিবি একটি দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে ফকনারের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে আলোচনায় বসে। আলোচনার সময় তার নিন্দনীয় ও অপমানজনক আচরণ সত্ত্বেও তাকে আশ্বস্ত করা হয়, তার সমস্ত অভিযোগের সমাধান করা হবে। তিনি তার দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে অস্বীকৃতি জানান, যা তার দলকে হতাশ করে। একই সঙ্গে তার অবিলম্বে ফেরার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।”
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি টেস্ট, ৬৯ ওয়ানডে ও ২৪ টি-টোয়েন্টি খেলা ফকনার চলে যাওয়ার আগে ইচ্ছাকৃতভাবে হোটেলের সম্পত্তির ক্ষতি করেছেন বলেও অভিযোগ পিসিবির। “শনিবার সকালে চলে যাওয়ার আগে ফকনার ইচ্ছাকৃতভাবে হোটেলের সম্পত্তির ক্ষতি করেছেন এবং এর ফলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। পিসিবি পরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ পায় যে, বিমানবন্দরে ফকনার অনুপযুক্তভাবে আচরণ এবং গালিগালাজ করেছেন। পিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছে, জেমস ফকনারকে ভবিষ্যতে পাকিস্তান সুপার লিগের ড্রাফটে রাখা হবে না।” এবারের আসরে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ফকনার খেলেন ছয় ম্যাচ। বল হাতে ৬ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ৪৯ রান করেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২ | সময়: ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ