চাঁপাইনবাবগঞ্জে এমপির নির্দেশে দলীয় নেতার গাড়িতে হামলা

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট) আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরেক বিএনপি নেতা ও পরিবারের সদস্য এম মাজিদুল ইসলামের গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন হামলায় আহত এম মাজিদুল ইসলাম।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের ভাঙ্গা কালভার্টের কাছে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ঘটনার রাতে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমপি আমিনুল ইসলামের নামে হুকুমের অভিযোগ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নাচোল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মহিলাদলের সাধারন সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচির বাবা এম মাজিদুল ইসলাম। গাড়িতে আরও ছিলেন তন্ময় আহমেদ ও তার ছেলে এবং সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি। মামলার আবেদনে প্রধান আসামি করা হয়েছে ভোলাহাট উপজেলার বটতলা গ্রামের মৃত ফরিজুদ্দিনে ছেলে দলদলী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ইবনে কাজেমকে। হুকুমদাতা হিসেবে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে বিএনপির সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামকে।
হামলার শিকার বিএনপি নেতা, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এম মাজিদুল, নাচোল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ ও সোলাইমান আলী বৃহস্পতিবার সকালে একটি গাড়িতে করে নাচোল থেকে ভোলাহাটে যায়। সেখান থেকে নাচোলে যাওয়ার পথে দলদলী ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে পৌঁছালে গাড়ির গতিরোধ করে হামলা করা হয়। এ সময় ইট দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা তন্ময় আহমেদ বলেন, ভোলাহাট থেকে রওনা দেওয়ার পর থেকে ইবনে কাজেম আমাকে কয়েকবার ফোন দিয়ে আমাদের লোকেশন জানতে চায়। না বললে আমাদের গাড়ির পিছু নেয়। পরে বরইপাড়া গ্রামে পৌঁছালে গাড়িতে হামলা করে। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে কাজেমের পা ধরে মাফ চাইলেও ছাড়েনি৷ এমনকি আর কোনদিন ভোলাহাটে আসব না বলে ফোনে এমপি আমিনুলের কাছে ওয়াদা করলে ছেড়ে দেয় তারা।
এম মাজিদুল ইসলাম জানান, পথরোধ করে এলোপাথাড়ি গাড়ির সামনের গ্লাসের উপর ইট নিক্ষেপ করতে থাকে হামলাকারীরা। তারা চারদিক হতে লোহার রড, হাতুড়ি নিয়ে গাড়ির সামনে পিছনে এবং দুই পাশের গ্লাসের উপর আঘাত করে গাড়ি ভাংচুর করে। এমনকি গাড়ির লোকজনদের গাড়ি থেকে টেনে বের করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় তন্ময়ের ছেলে রিককেও (৮) গাড়ি থেকে নামিয়ে টানাহেঁচড়া করে তারা।
ঘটনার পর তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম সেলিম। তিনি জানান, তারা ভোলাহাট ছাড়ার পর হঠাৎ আমার ফোনে কল দিয়ে বলে আমাদের উপর হামলা হয়েছে উদ্ধার করো। এরপর পুলিশকে জানিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দেখি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তাদেরকে মারধর করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাড়ইপাড়া ভাঙা কালভার্ট এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে গাড়ির সামনে মোটরসাইকেল ফেলে দিয়ে গতিরোধ করে। এসময় ব্যাপক ইটপাটকেল দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। আশেপাশের লোকজন চলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
মামলার আবেদনে আরও যাদেরকে আসামি করা হয়েছে- ভোলাহাট উপজেলার বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন (৫০), উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন (৪৫), উপজেলা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মুনসুর আলী (৪২), মামুন (৩৫), উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (২৫ ), জহির (৩৫), হযরত ওরফে সুলভ (২০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান (৪২), উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহসিন (২১), উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লাল দেওয়ান (৪৩), উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুর রাকিব (২৬), উপজেলা যুবদলের সভাপতি বেলাল উদ্দিন (৪৫), জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০), আসাদুল (২৮), জুয়েল (৪৫)।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। তাছাড়া তারা আমরা পরিবারের আত্নীয়-স্বজন। এতে কোনভাবেই আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ভোলাহাট থানার ওসি (তদন্ত) রেজওয়ানুল হক বলেন, গাড়িতে হামলার খবর পেয়ে আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তা আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে মামলা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ | সময়: ৮:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ