গুগল-উইকিপিডিয়ায় চাকরির প্রলোভনে ফল বিক্রেতার ফাঁদে শতাধিক নারী

ঢাকা অফিস: ইকিপিডিয়া ও গুগলে চাকরির প্রলোভনে প্রতারিত হয়েছেন শিকার হয়েছেন শতাধিক নারী। তাদেরকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আল ফাহাদ (১৯) নামে এক তরুণ।ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশানের নৰ্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি দামি ক্যামেরা, দুটি ক্যামেরার লেন্স, একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড, একটি এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ভুক্তভোগীদের বরাতে র‍্যাব জানিয়েছে, চাকরির জন্য ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিং’ (স্বাস্থ্য পরীক্ষা)-এর নামে গোপনে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতেন ফাহাদ। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে দফায় দফায় টাকা দাবি করতেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অল্পবয়সী নারীদের দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায়, যেমন—গুগল-উইকিপিডিয়াতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাতেন আল ফাহাদ। চাকরিপ্রত্যাশী অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩৫০-৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেওয়া হতো। নারী প্রার্থীদের সঙ্গে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে নারীকণ্ঠে কথা বলতেন ফাহাদ। এতে নারীরা আরও আগ্রহী হতেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রার্থীদের ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিংয়’ করা হবে বলে জানানো হতো। তাদেরকে অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করা হতো। এসময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিওকলে মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করতেন ফাহাদ। পরবর্তীতে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন তিনি। এভাবে ফাহাদ শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলেছেন।

নারীদের যেভাবে ফাঁদে ফেলতেন ফাহাদ
র‍্যাব জানিয়েছে, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কণ্ঠ পরিবর্তন করে নারীকন্ঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করতেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছেন বলে জানাতেন। পরে নিজেই ওই কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিতেন এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিতেন। এরপর আবারও অ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করতেন। যেহেতু করোনার সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজ ছিল না, সেক্ষেত্রে ফাহাদ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে নারী প্রার্থীদের ফাঁদে ফেলেন। তাধিক নারীকে চাকরির প্রলোভনে গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করেছে ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হতো। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইল করা হতো।

ফেসবুকে নামে-বেনামে বিভিন্ন পেজে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতেন ফাহাদ

কে এই আল ফাহাদ
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতার ফাহাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার সঙ্গে রেলস্টেশনের পাশে ফলের দোকান চালাতেন। ফল বিক্রির আড়ালে ফেসবুকে ‘অনলাইন জব বিডি’ ও ‘পার্ট টাইম জবস ইন ঢাকা’ এবং ‘পার্ট টাইম জবস ইন বাংলাদেশ’ নামে গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। গ্রুপে দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে চাকরির নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন তিনি। প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু নারীদের ভুয়া আইডি ব্যবহার করতেন ফাহাদ। এদিকে, ফাহাদের কাছ থেকে ইয়াবা জব্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। র‍্যাব জানিয়েছে, শুধু ফাহাদ নয়, করোনা মহামারির শুরু থেকেই অপরাধীরা ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছে। নারীদের হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে। ভুক্তভোগী অনেকে ‘রিপোর্ট টু র‍্যাব’ ও র‍্যাবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। অনেকে র‍্যাবের কাছে সরাসরি অভিযোগও দেন। তথ্য পর‍্যালোচনা করে অভিযুক্তদের ধরতে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ | সময়: ২:০৭ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ