শিশুবিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদের উদ্যোগ জরুরী : জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হিসেবে শিশুবিবাহ বিবেচনা করা হলেও সরকারী ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে শিশুবিবাহ বন্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সরকার শিশুবিবাহ প্রতিরোধে আইন প্রনয়ণ করেছেন। শিশুবিবাহের কূফল সম্পর্কে জানাতে প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশসহ জনসচেনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণে সকলে এগিয়ে এলে শিশু বিবাহ বন্ধে কার্যকর ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন বক্তারা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শিশুবিবাহ প্রতিরোধে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) আয়োজন করে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যান চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। পরামর্শ সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এসিডি নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার। সভায় শিশু বিবাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মূখ্য আলোচনায় অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর এবং জনসংযোগ প্রশাসক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে।
প্রধান অতিথি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, শিশুবিবাহ ও সামাজিক সহিংসতা প্রতিরোধে নবীন-প্রবীণ ও অভিভাবকদের সমন্বিত করে জনসচেনতার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। সরকার এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সামাজিক এই সংকট মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্ন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠানসহ সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উপর তাগিদ দেন।
মূখ্য আলোচক প্রফেসর ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, শিশুবিবাহ রোধে সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। একটা দেশ এগিয়ে যেতে সময় লাগে। এখন দেশ অনেক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সবাইকে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন। সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যান চৌধুরী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে একটা সময় আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। এখন সে রকম আন্দোলন নেই। তবু মানুষ এ বিষয়ে এখন যথেষ্ট সচেতন। তথ্যভান্ডার তৈরির বিষয়ে আমরা জোরালো গুরুত্ব দিচ্ছি। শিশুবিবাহ রোধে একটা জাতীয় কমিটি গঠণ করা হয়েছে। সরকারের একার পক্ষে সব সমাধান করা সম্ভব নয়। সে জন্য সবাইকে সমষ্টিগতভাবে সহায়তা করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসিডি নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, শিশুবিবাহ এক সামাজিক ব্যাধি, এ কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, নারী শিক্ষা, ক্ষমতায়ন, আত্ননির্ভরশীলতা যা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে এসডিজির ৫ নং অভীষ্ট (লিঙ্গতিত্তিক সমতা ও নারীদের ক্ষমতায়ন) অর্জন বাঁধাগ্রস্থ হতে পাওে তাই সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ ছাড়া শিশু বিবাহবন্ধ করা অত্যন্ত দুরহ। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নেও হুমকির মুখে পড়তে পারে। শিশু বিবাহের মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি শিশুর জীবন নষ্ট হয় না, এর প্রভাব সুদূর প্রসারী, এর দায় বহন করতে হয় পরবর্তী প্রজন্ম, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে।
পরামর্শ সভায় বক্তারা বাল্যবিবাহ বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা, শিশুবিবাহ রোধে বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন, শিশুবিবাহ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক চর্চা, রীতিনীতি ও আচরণের পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, শিশুবিবাহ প্রতিরোধ ইউনিয়ন এবং উপজেলা কমিটির সক্রিয় এবং শক্তিশালী করা, শিশুবিবাহ প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট সব উদ্যোগে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আন্তমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় এবং কার্যকর উদ্যোগ এবং একই সাথে শিশুবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানোর উপর জোর তাগিদ দেন।
এসিডি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম পায়েল শিশুবিবাহ প্রতিরোধে যে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তা মাল্টিমিডিয়ায় সকলের সামনে উপস্থান করেন। পরামর্শ সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহীর বিভাগের পরিচালক জালাল আহমেদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ, রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, রাজশাহী জেলা শিশু বিষযক কর্মকর্তা মনজুর কাদেরসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী দফতরের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, কাজী, ইমাম, শিক্ষক, বেসরকারী সংগঠন এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ এসিডির শিশু ও কিশোর কিশোরী দলের সদস্যবৃন্দ।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ | সময়: ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ