জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূ-গর্ভাশায়ন

নুরুজ্জামান, বাঘা: পৃথিবীর সকল প্রাণীকুল রক্ষার জন্য মাটির নিচ থেকে পানি তুলার গল্প আমাদের সকলের জানা। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূ-পৃষ্ঠের অতিরিক্ত পানি ভূ-অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করার গল্প হয়তো অনেকেরই অজানা।
সম্প্রতি বাঘার একটি বিলে নিজ উদ্যোগে এমন পদ্ধতি চালু করে ফসল ফলানোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার শত-শত কৃষক।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে বাঘার শরিফাবাদ মৌজার পাটনি পাড়া, তেঁথুলিয়া ও কামার পাড়া এবং বাজুবাঘা মৌজার নওটিকা, আমোদপুর এবং তেপুকুরিয়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধা নিরসনে বিলের পানি মাটির তলোদেশে নামানোর জন্য পাইপ পোতার কাজ চলছে। আর এটি নিজ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান।
ধারনা করা হচ্ছে, কৃষি অফিসারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রায় দুইশ বিঘা অনাবাদি জমি বোরো ধান আবাদে পরিনত হবে। এতে করে উপকৃত হবেন এ অঞ্চলের শত-শত কৃষক।
পাটনি পাড়া বিলের কৃষক বয়েজ উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকার বিল সমুহে এর আগে মাটির নিচে পাইপ পুতে স্যালো ম্যাশিনের মাধ্যমে পানি তুলে আমরা বোরো ধানের আবাদ করেছি। কিন্তু বর্তমানে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন এবং কোন-কোন বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অত্র এলাকার ৫-৬ টি গ্রামের প্রায় দুইশ বিঘা জমির উপরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে আমরা সারা বছর কোন ফসলই ফলাতে পারছি না।
তিনি বলেন, বিষয়টি বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবগত করা হলে তিনি আমাদের বিল পরিদর্শন করেন। চারটি জায়গায় নিজ খরচে পাইপ পুতে দেয়ার উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
আমার বিশ্বাস, এ বিলে চারটি স্থানে পাইপের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের অতিরিক্ত পানি ভূ-অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করলে এখন যেমনটি আবাদ করা সম্ভব। অনুরুপ পরবর্তীতে সেই পানি খরা মৌসূমে সেচ কাজে ব্যবহার করেও অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি এই পরিকল্পনা গ্রহন করার জন্য কৃষি অফিসারকে ধন্যবাদ জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। বর্তমান সরকার কৃষি খাতে ব্যাপক পরিমান ভুর্তুকি দিচ্ছেন। যাতে করে বাংলাদেশ কৃষি সমৃদ্ধশালী একটি উন্নত দেশে পরিনত যায়। আমি সেই লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে উদ্যোগটি নিয়েছি এটিকে বলা হয় ‘ভূ-গর্ভাশায়ন। উন্নত দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও কোন-কোন এলাকায় এ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
তার মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খরা প্রবণ এলাকায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে জমা রেখে শুষ্ক মৌসুমে এ পানি নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাবে এবং জলাবদ্ধ এলাকার অতিরিক্ত পানি ভূ-গর্ভে রিচার্জ করে জলাবদ্ধ এলাকার জমিকে চাষাবাদ উপযোগী করা সহ লবনাক্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে পানি ভূ-গর্ভে রিচার্জ করে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ এমনকি সুপেয় পানি হিসেবেও পান করা যাবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ