নতুন ইসি গঠন : সার্চ কমিটিতে অন্তত ৫০০ ব্যক্তির নাম

সানশাইন ডেস্ক: প্রস্তাবিত নাম জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অন্তত পাঁচশ ব্যক্তির নাম জমা পড়েছে সার্চ কমিটিতে। এরমধ্যে নিবন্ধিত দুই ডজন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছয় পেশাজীবি সংগঠন প্রস্তাব করেছে নাম। এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবন বৃত্তান্তও জমা পড়েছে কয়েকশ’।
শুক্রবার সার্চ কমিটি গঠনের এক সপ্তাহের মাথায় প্রস্তাবিতদের নাম সংগ্রহ শেষ হল। এর বাইরে শনি ও রোববার বিশিষ্টজনের মতামত নেবে কমিটি। শুক্রবারের মধ্যে সব মিলিয়ে কত সংখ্যক নাম জমা পড়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব শফিউল আজিম সাংবাদিকদের জানান, “২৪টি দল ও ছয়টি পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে মনোনয়নসহ প্রস্তাব পেয়েছি। ইমেইলে বেশ অনেক বড় সংখ্যায় সাড়া পেয়েছি।“
এদিন বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় জানা গেছে, আওয়ামী লীগসহ ২৪টি দল নাম সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছে। বিএনপি এ সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাম সুপারিশ করবে না বলে আগেই জানিয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাংগঠনিক পর্যায় থেকে নাম আসার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে ইমেইল এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেশ বড় সংখ্যক নামের প্রস্তাব জমা হয়েছে।
কোন কোন দল এবং সেগুলো কাদের নাম প্রস্তাব করেছে তা জানায়নি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নির্ধারিত ইমেইলে এবং সরাসরি গিয়ে প্রস্তাবিত নাম জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল শুক্রবার বিকাল ৫টা। আইন অনুযায়ী এসব প্রস্তাবের মধ্যে থেকে অনুসন্ধান কমিটি যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম এবং অযোগ্যতা বিবেচনা করে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠনে পাঁচ বছর আগে সার্চ কমিটির কাছে ১২৮ জনের নাম সুপারিশ এসেছিল; যা থেকে বাছাই করে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিল তৎকালীন সার্চ কমিটি। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন। গত শনিবার রাষ্ট্রপতি নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন।
হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবারের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
শুক্রবারের মধ্যে সব মিলিয়ে কত সংখ্যক নাম জমা পড়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব শফিউল আজিম সাংবাদিকদের জানান, ৫টায় তো সময় ছিল, আমরা জাস্ট ক্লোজ করেছি। কম্পাইলেশনে এখনও যাইনি। “আরও কাজ রয়ে গেছে, সিস্টেমেটিক ওয়েতে আমাদের মেথডে কম্পাইল করব। আমরা নির্ধারিত পদ্ধতিতে কম্পাইলেশন করে কমিটির সামনে উপস্থাপন করব। কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে।”
এর আগে নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি সংলাপ করেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। ৩২টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৫টি দল বঙ্গভবনে আলোচনায় যোগ দেয়। বিএনপিসহ সাতটি দল সংলাপের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। সংলাপে অধিকাংশ দলের দাবি অনুযায়ী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়।
এরপর সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয়। সেই আইনের আলোকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হয় গত শনিবার। আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্ত করার জন্য সার্চ কমিটি ১৫ দিন সময় পাবে।
কমিটি গঠনের পর গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে কমিটি তিন ঘণ্টাব্যাপী প্রথম সভা করে। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠক শষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ দুই সভায় নাম সংগ্রহে নিবন্ধিত ৩৯ দলকে চিঠি দেওয়া, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নাম জমার সময় বেঁধে দেওয়া এবং ৬০ বিশিষ্টজনের মতামত নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ও ১৩ ফেব্রুয়ারি রোববার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে তিন ধাপে বৈঠক করবে কমিটি। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার শেষ হচ্ছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশনের মেয়াদ।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২ | সময়: ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর