খরচ বাড়ছে বোরো চাষে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি সহ চাষাবাদের উপকরণ ও আনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। কৃষকরা লাভের মুখ দেখা দূরের কথা উৎপাদনের খরচ তুলতে হিমসিম খাচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর কমতে শুরু করেছে বোরোর চাষাবাদ।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগমারা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ধানের মূল্য কম হওয়ায় লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারো বোরো চাষে নেমে পড়েছে কৃষক। ধানের মূল্য হ্রাস পাওযায় উৎপাদন খরচ জুটছে না তাদের। ফলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মুলধন হারিয়ে দিশাহারা হয়ে বোরো চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই মহাজন ও ব্যাংক ঋণের টাকায় ফসল করে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ভিটে মাটি বিক্রি করে নিঃশ্ব হয়ে পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত কিন্তু‘ কৃষকদের কৃষি পণ্যের দাম বাড়ছে না। এতে কৃষি ফসল উৎপাদন করে বেশী লোকশান গুনতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি দু-দফায় ইউরিয়া সার ও চার দফায় ডিজেলের দাম বেড়েছে।
উপরন্ত সরকার গ্রাম পর্যায়ের কৃষকদের কথা না ভেবে কৃষি উপকরণের দাম বাড়িয়েই চলেছে। গ্রামের কৃষকদের অবলম্বন কৃষি। অন্য কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে আদি পেশা কৃষি উৎপাদনে মওসুমে বোরো চাষ অব্যাহত রেখেছেন।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এই উপজেলায় ১৯ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্বারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫শ হেক্টর কম।
তবে কৃষি বিভাগের মতে, গত বছরের তুলনায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা বেশি নির্ধারন করা হলেও ধানের দর কমে যাওয়া ও কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং কৃষকরা ধানী জমিতে পুকুর খনন করায় ধানী জমি কমে যাওয়ায় বোরো চাষের প্রকৃত লক্ষমাত্রা অর্জন করা এ বছরও সম্ভব হবে না।
তাই কৃষকরা এখানে অনেকটা ধীর গতিতে বোরো চাষ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় ৮হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ শুরু হয়েছে। তবে আলু উত্তোলনের পর বাকী জমিতে পর্যায়ক্রমে বোরো চাষ শুরু হবে বলে ধারনা করছে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, এই এলাকার লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরের ন্যায় কৃষকরা এবারেও বুক ভর আশা নিয়ে কৃষি কাজে নামে। তাদের ক্ষেতে ধান, পেঁয়াজ পাটসহ সবজি ফসলের উৎপাদন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ উঠছে না। উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের কৃষক আজহার আলী জানান,চার যুগ ধরে তিনি কৃষি কাজ করে আসছেন।
কিন্তু এ বছর বোরো চাষ করে তিনি কোন লাভের সম্ভাবনা দেখছেন না। তাই গত বছরের তুলনায় এবার তিনি অর্ধেক জমিতে বোরো চাষ করবেন বলে জানান। অবশিষ্ট জমিতে ভুট্রাসহ অন্যান্য আবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
তিনি জানান, পেঁয়াজ, ধান, পাট, সব^জির দাম কমছে। অন্য দিকে বাড়ছে সার, কীটনাশক ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম। এ অবস্থায় মওসুমে আবারো বোরো চাষ করতে হবে। মহাজনের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তাই এ অবস্থায় ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
একই গ্রামের কৃষক এবাদুর রহমান জানান, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ৩০ হাজার টাকা লোকশান হয়েছে তার। এবারে ধানের চাষে গত বারের তুলনায় বেশী খরচ হবে জেনে তিনি শুধুমাত্র খাবার পরিমান ধান চাষ করবেন বলে জানান। সেউজবাড়ি গ্রামের কৃষক এমাজ উদ্দিন জানান, বাপ দাদার চৌদ্দ পুরুষ ধরে কৃষি কাজে জড়িত, বর্তমানে কৃষি কাজে নিঃশ্ব হয়ে গেলাম। কিন্তু বিকল্প কোন পথ নেই। তাই লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়েও বোরো চাষে নেমেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া সহ বিভিন্ন কারণে এখানে বোরো চাষ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ধান চাষের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা কৃষকদের ধানের তুলনায় কম খরচ ও অল্প সেচে গম ও ভুট্রার মত আবাদ করার পরামর্শ দিচ্ছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাগমারায় ব্যাপক হারে ধানী জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে করে রাতারাতি সেগুলো পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে ব্যাপক হারে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক সুফিয়ান জানান, অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে আমরা কঠোর নজরদারী বজায় রেখেছি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২ | সময়: ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর