সর্বশেষ সংবাদ :

পদ্মার চরে বরইচাষে বিপ্লব

নুরুজ্জামান, বাঘা: রাজশাহীর সীমান্তবর্তী একটি উপজেলার নাম বাঘা। এর দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। তার বিপরীতে চরাঞ্চল হিসাবে খ্যাত উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন সহ অপর ছয়টি ইউনিয়ন এবং দুই পৌর সভার কৃষকরা উন্নত জাতের বরই চাষকরে কৃষি ক্ষেত্রে এনে দিয়েছেন নতুন বিপ্লব। এরমধ্যে চরাঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকরা বরই চাষে ঝুকে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অঞ্চলের মাটি বরই চাষের জন্য উপযোগী। তাদের মতে, সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে বাঘার বরই বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এর ফলে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন এ অঞ্চলের কৃষক।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পদ্মার চরে বরই চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত জমিতে বরই চাষ করে একদিকে ওরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। কম খরচে বেশি লাভের আশায় চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন এলাকায় আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারা।
চরের বরই চাষীরা জানান, বালুযুক্ত পদ্মার চরে একসময় অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে এই চরে বরই চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে শফিকুল ইসলাম ছানা, বাঘা পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা ও ইউসুফ আলী সহ অনেকে। পদ্মার চরে এখন সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমাণ করছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় প্রায় এক হাজার একর জমিতে বরই চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচশ একর চাষবাস হয়েছে কেবল দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তাদের তথ্য মতে, বরই চাষ এ অঞ্চলে নিয়মিত অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশা-পাশি উল্লেখ যোগ্য অর্থকারী ফসল। যা কৃষি ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। কৃষি বিভাগের মতে, এখানকার মাটি দো-আঁশ। যা বরই চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী।
চরাঞ্চলের বরই চাষী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের কুলবরই ছাড়াও উন্নত জাতের আপেল কুল, বাউকুল, তাইওয়ান ও থাইকুলের চাষ হচ্ছে ব্যপক ভাবে। এরমধ্যে আপেল কুল জনসাধারণের কাছে বেশি সমাদৃত। কুলের চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ, সার-বিষ ইত্যাদি সুবিধা ও আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা পেলে বরই চাষে আগামীতে আরো বিপ্লব সাধিত হবে।
তিনি বলেন, এ বছর ৪০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করেছি। এরমধ্যে আপেল কুলে কিছুটা বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য সকল কুলে তিনি বিঘা প্রতি ১৫০ থেকে ৬০ মণ হারে ফলন পাবেন। তিনি জানান, এই কুলবাগান রোপন ও পরিচর্যায় তার গত একবছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।
তিনি আশাবাদী কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ সকল বাগান থেকে চলতি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার কুল বিক্রয় করতে সক্ষম হবেন। তার মতে, এ অঞ্চলের কুল অঞ্চলের চাহিদা পুরণের পাশা-পাশি প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা সহ সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল এলাকায় চালান দেয়া হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লা সুলতান বলেন, এ অঞ্চলের মাটি কুল চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী হওয়ায় বর্তমানে এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে কুল চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন।
তার মতে, ক্যালরি সম্পন কুলের গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত তৈরী করে ব্যাপক হারে চাষাবাদের ব্যবস্থা করলে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল আমের পরে হবে বরই এর স্থান। যা বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকদের সাবলম্বী করতে সাহায্য করবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ | সময়: ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ