অটোরিকশাতেই জীবনের রূপান্তর ঘটলো রফিকের

সানশাইন ডেস্ক : ১৯ বছরের তরুণ রফিক তার মা ও ছোট বোনকে নিয়ে রাজধানীর বাইরের কুরিগ্রামের একটি বস্তিতে বাস করেন। তাদের জীবনের আসল সংগ্রাম শুরু হয় রফিকের বাবার মৃত্যুর পর। রফিকের বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর রানি আক্তার পরিবারের হাল ধরেন, কাজ শুরু করেন কনস্ট্রাকশন ফার্মের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে। সে সময় ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তাদের ছোট বাসাটিও ছেড়ে দিতে হয়।
এক তপ্ত দুপুরে রানি কাজ করতে করতে অচেতন হয়ে পড়েন, তার হাঁটু ভেঙ্গে যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও আঘাত লাগে। তাকে সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা জানান তার দু’টি কিডনিই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কথা শোনার পর তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। এ অবস্থায় পরিবার ও ছোট বোনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন রফিক; সে সময়েই তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। মায়ের এ অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আর্থিক বিষয়টিকে রফিককেই দেখভাল করতে হয়।
শুরুর দিকে রফিক একটি চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করে; কিন্তু সেটা দিয়ে তিনি পর্যাপ্ত অর্থ যোগান করতে পারেননি। মায়ের শেখানো নীতি ও কঠোর দিক নির্দেশনার কারণে তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেননি। সময়ের সাথে সাথে তাদের জমানো টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছিলো, এ পরিস্থিতিতে তাদের জীবন চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো, আর তার জন্য রফিকের শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি ব্যাহত হয়ে যায়।
এ সময় রফিকের সাহায্যে এগিয়ে আসে তার পুরনো এক বন্ধু – যে কিনা বাজাজ আর ই অটোরিকশা চালায়, সে তাকে থ্রি হুইলার অটোরিকশা চালানোর পরামর্শ দেয়। রফিক তার পরামর্শ মেনে অটোরিকশা গ্যারেজের মালিকের কাছে যান এবং সেখানে তাকে অটোরিকশা চালানোর সুযোগ করে দেয়া হয়। পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর সেশনে তিনি বাহনটি চালানোর ক্ষেত্রে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর কিছু দিন পরেই তিনি কুরিগ্রামের রাস্তায় বাজাজ আরই চালানো শুরু করেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বাহনটি চালান। মালিককে তার সাপ্তাহিক আয়ের একটি অংশ দেয়ার পর বাকী অংশ পরিবারের প্রয়োজনীয়তায় ব্যয় করেন।
প্রায় দুই বছর ভাড়ায় এলপিজি থ্রি-হুইলার চালানোর পর, তিনি তার নিজের বাজাজ আরই চালানোর মাধ্যমে কিছু বেশি টাকা আয়ের প্রয়াস দেখান। এ লক্ষ্যে তিনি কুরিগ্রামের নিকটস্থ বাজাজের শো-রুমে গিয়ে বাহনটির দাম সম্পর্কে খোঁজ নেন। দোকানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন বাহন কেনার ক্ষেত্রে রানার অটোমোবাইলস ইএমআই সুবিধা দেয়। এটি রফিকের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। তিনি তার এবং তার মায়ের জমানো সঞ্চয় দিয়ে রফিক প্রাথমিকভাবে কিছু পেমেন্ট পরিশোধ করেন এবং নিজের জন্য বাজাজ আর ই এলপিজি অটোমোবাইল কিনে নেন।
এ নিয়ে ২১ বছর বয়সী রফিক বলেন, ‘এত কম সময়ে নিজের জন্য একটি অটোরিকশা কিনতে পারবো, তা আমি ভাবতেও পারিনি। এই অটোরিকশা আমার জীবনের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে। আমি আমার উপার্জন দিয়ে মায়ের চিকিৎসা খরচ চালাতে পেরেছি এবং আমার বোনের স্কুলের খরচ দিতে পেরেছি। এ বছর আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবো বলে আশা করছি। রানার অটোমোবাইলস ও বাজাজ আমার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছে।’
বাজাজ আর ই থ্রি হুইলারটি চালিয়ে রফিকের মতো অনেকেই নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে। বিশেষ করে, রানার অটোমোবাইলসের ইএমআই সুবিধা থ্রি হুইলার কেনার বিষয়টিকে গতি দিয়েছে। অনেকেই একসাথে অনেক টাকা দিয়ে থ্রি হুইলার কেনার ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের কথা বিবেচনা করে ও উন্নত জীবনের বিষয়টিকে নিশ্চিত করে ইএমআই সুবিধার মাধ্যমে থ্রি হুইলার কেনার সুযোগ করে দিয়েছে রানার অটোমোবাইলস।
বাজাজ আর ই থ্রি হুইলার সমাজের বিভিন্ন বয়সী মানুষদের স্বপ্ন পূরণের সারথি হিসেবে কাজ করছে; একইসঙ্গে বাজাজ ও রানার অটোমোবাইলস সাধারণ যাত্রীদের স্বাচ্ছ্যন্দে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করছে। এছাড়াও, এলপিজি অটোমোবাইলের চালকরা দ্রুত ও সাশ্রয়ী পরিবহন সেবার মাধ্যমে কমিউনিটির মানুষদের সেবা করছে; একইসঙ্গে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় ভারও মেটাচ্ছেন। সমাজের ইতিবাচক রূপান্তরের মাধ্যমে ও রানারের কার্যকর ইএমআই পরিকল্পনার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মানুষদের একটি উন্নত জীবনদানে আশার আলো সঞ্চার করছে বাজাজ আর ই থ্রি হুইলার।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ | সময়: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ