বিলুপ্তি প্রায় ২০০ বেশি ধানের বীজ সংরক্ষণকারী কৃষক ইউসুফ আর নেই

আসাদুজ্জামান মিঠু: বরেন্দ্রর কৃতি সন্তান কযেকশ প্রজাতির লুপ্ত ধান সংরক্ষক, জাতীয় পরিবেশ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত আদর্শ কৃষক, তানোর নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ক্ষৃক ইউসুফ মোলা (৮০)আর নেই ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। ১৪ জানুয়ারী শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার সময় নিজ বাসভবন তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামে ইন্তিকাল করেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। এক ছেলে দুই মেয়েসহ নাতি নাতনী আত্মস্বজন অনেক গুণাবলি রেখেগেছেন। মহুরমের জানাজার একই দিন শুক্রবার বিকাল ৪টার সময় দুবইল হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তনে দাফন করা হয়েছে।
কৃষক ইউসুফ মোল্লার জানাজায় উপজেলা কৃষি বিভাগ,বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(বিএমড়িএ) কর্মকর্তা, পৌর মেয়র,ইউপি চেয়ারম্যান ও কয়েক হাজার কৃষক উপস্থিত ছিলেন। তার এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে উপজেলা জুড়ে।
যুবরাজ,সাদাকথা, রাধুনি পাগল, পাঙ্গাস, ঝিঙ্গাশাইল, কালজিরা, সুবাশ, বাঁশমতি, চিনি শঙ্কর, বাদশাভোগ, এক ধানে দুই চাল, বিন্নি। এসব ধানের নাম এখন আর অনেকের মনে নেই। নতুন প্রজন্ম তো দুরের কথা প্রবীনদের অনেকের মনের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে নামগুলো।
তবে এসব ধান অনেক যত্নে আগলে রেখেছেন কৃষক ইউসুফ মোল্লা। গত ২০ বছর যাবত বীজের পরিধি বাড়াতে ৫২ জাতের ধান চাষাবাদ করেছিলেন। চলতি মৌসুমে সে গতি বেড়ে তিনি চাষাবাদ করেছেন ৭২ জাতের/ রকমের ধান চাষ।
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এতো রকম জাতের ধান একসঙ্গে চাষাবাদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে ইউসুফ মোল্লাই প্রথম স্থানে আছেন বলে দাবি করেছেন ইউসুফ মোল্লাসহ কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষক ইউসুফ মোল্লার ব্যাক্তি উদ্যোগে এসব বিলুপ্ত ধানের বীজ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষরণ করে রাখছেন। ২০১২ সাল থেকে রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুরসহ সারাদেশে প্রায় ৩০০ কৃষককে তিনি এসব বীজ শর্তসাপেক্ষে সবরাহ করেছেন। এছাড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকায় ১০০ এর বেশি ও রাজশাহী গবেষণা গারে প্রায় ৬৫ জাতের ধান বীজ সরবারহ করেছেন।
ইউসুফ মোল্লা আদর্শ কৃষক। আদর্শ কৃষক হিসেবে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তার প্রচেষ্টায় বিলুপ্তি প্রায় ২০০ বেশি ধানের বীজ সংরক্ষেণে আছে।
ইউসুফ মোল্লা পরিবেশ বান্ধব সুগন্ধি এসব ধান অল্পদিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই তিনি গত বিশ বছর ধরে বীজ সংগ্রহের কাজ করতেন। এখন পর্যন্ত ৪০০ বেশি বিভিন্ন জাতের ধান বীজ তিনি সংগ্রহ করেছেন। ২০১২ সাল থেকে ৫০টি করে জাতের ধান তিনি অল্প করে আবাদ করেন। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতারণ করছেন।
কৃষক ইউসুফ মোল্লার সংগ্রহে থাকা ১০০ প্রজাতির বেশি বীজ গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহী ধান গবেষণা কেন্দ্রে ৬৫ রকম বীজ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ৭২ ঝিনাইদহ ১২ প্রকার জাতের ধান সরবরহ করেছেন। তারা সেগুলোর বিস্তার করা নিয়ে গবেষণা করছে।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শমসের আলী বলেন,কৃষক ইউসুফ মোল্লার ৩০ বছরের প্রচেষ্টায় বরেন্দ্র থেকে অনেক নামী দামি বিলুপ্তি ধানগুলো নতুন করে জীবন পেয়েছেন। সে সাথে দেশের মধ্যে তানোর উপজেলার কৃষক হিসাবে ইউসুফ মোল্লা রাজশাহী তথা বরেন্দ্রঞ্চলের সুনাম ধরে রেখেছেন। তাছাড়াও বিলুপ্তি ধান সর্ম্পকে নতুন প্রজন্মরা জানতে পারছিল। তার মৃত্যুতে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা একটি সম্পদ হারিয়ে ফেললো।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ