সর্বশেষ সংবাদ :

বিন্দু, বিন্দুতেই সিন্ধু অপচয়

উপল আরাফাত: রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে শুক্রবার বিয়ের আয়োজন ছিল। দুপুরে বরযাত্রীরা যথা সময়ে উপস্থিত। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই খাবার আয়োজন। টেবিলের উপরে সাজানো আছে অনেক দামি খাবার। রোস্ট, পোলাও, মাংস, সালাদ, আরো কতো কি। খাবার শেষে অনেকের পাতেই থেকে যায় খাবার। কারো পাতে মাংস, কারো পাতে পোলাও, আবার কারো পাতে রোস্টের অবশিষ্ট অংশ। ব্যক্তি হিসেবে নিজের কাছে সামান্য নষ্টটা কিছুই মনে হয় না। তবে, বিন্দু বিন্দুতেই সিন্ধু। ঠিক তেমনই আমরা বিন্দু বিন্দুতেই সিন্ধু পরিমানে খাদ্য নষ্ট করছি। এতে বিপুল পরিমানে খাবার আমরা নষ্ট করছি যে বছর শেষে এ পরিসংখ্যানটা চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো।
২০২১ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। সংস্থাটির ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২১ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই বছরে ১ কোটি ৬ লাখ ১৮ হাজার ২৩৩ টন খাদ্যের অপচয় হয়। একজন বাংলাদেশে পরিবার প্রতি বছরে গড়ে ৬৫ কেজি খাবার অপচয় করেন। এগুলো শুধু গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত খাদ্যের অপচয়।
খাদ্য অপচয় সূচক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে দেখানো হয় যে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৯৩ দশমিক ১ কোটি টন খাদ্য অপচয় করা হয়েছে। এর মধ্যে গৃহস্থালী থেকে নষ্ট হয়েছে ৬১ শতাংশ খাবার। ২৬ শতাংশ খাবার নষ্ট করেছে খাদ্য বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে নষ্ট হয়েছে বাকি ১৩ শতাংশ খাবার।
বিপুল পরিমানে গৃহস্থালী খাদ্য অপচয়ে নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়া কোন বিকল্প নেই। খাদ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও ব্যক্তিত্বদের মতে, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা না বাড়লে এ খাদ্য অপচায় কোনভাবেই রোধ করা যাবে না।
গৃহস্থালী খাদ্য অপচয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকানো যাক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের প্রত্যেক পরিবার বছরে গড়ে ৫০ কেজি করে খাবার অপচয় করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে টনের হিসেবে বছরে যা ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার টন। পাকিস্তানে প্রতি বছর পরিবারপ্রতি ৭৪ কেজি খাবারের অপচয় হয়। বছরে যা এক কোটি ৫৯ লাখ ৪৭ হাজার টন। এদিকে শ্রীলঙ্কায় বছরে পরিবার প্রতি ৭৬ কেজি খাবারের অপচয় হয়, যা সর্বোচ্চ। তবে টনের হিসেবে তা অনেক কম, মাত্র ১৬ লাখ ১৭ হাজার টন।
এছাড়াও মালদ্বীপে প্রতি বছর পরিবার পর্যায়ে ৭১ কেজি খাবার নষ্ট হয়। আফগানিস্তানে এই পরিমাণ ৮২ কেজি, নেপাল ও ভুটানে ৭৯ কেজি খাদ্য অপচয় হয়।
বিশ্বে বছরে প্রায় একশ’ ত্রিশ কোটি টন খাদ্য অপচয় হয়, যা মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অপচয় হওয়া বিপুল পরিমাণ এই খাবারের এক-চতুর্থাংশ বাঁচানো গেলে ৮৭ কোটি মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। বিশে^ খাদ্য অপচয়ের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পঁচাত্তর হাজার কোটি ডলার।
সিসিবিভিও’র চলমান রক্ষাগোলা গ্রাম ভিত্তিক স্থিতিশীল খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির সমন্বয়ক আরিফ বলেন, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি মাসে ১০ হাজার শিশু মারা যায় খাদ্যের অভাবে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ৮২ হাজার মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমায়। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত খাবারের ১৩০ কোটি টন মানুষ নষ্ট করে। যা মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ। এমন পরিসংখ্যা থেকেই বোঝা যায় যে আমাদের সামান্য সচেতনতা দেশ ও বিশে^ কি পরিবর্তন আনতে পারে।
আরিফ আরো বলেন, অপচয় হওয়া খাদ্যের পরিণাম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এই খাদ্য অপচয় যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে খাদ্যের সরবরাহ বাড়বে, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ কমবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ | সময়: ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ