সর্বশেষ সংবাদ :

ভলিবল খেলোয়াড় থেকে ক্রিকেটার এবাদত

স্পোর্টস ডেস্ক: স্বপ্ন কোথায় নিয়ে যেতে পারে মানুষকে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এবাদত হোসেন। স্বপ্ন দেখলে হয় না, সেই স্বপ্নকে লালন করতে হয়, স্বযতনে বড় করে তুলতে হয়। সবশেষে সফলতা হয়ে ধরা দেয় সেই স্বপ্ন। বাংলাদেশের ফাস্ট মিডিয়াম পেসার এবাদত হোসেন দেখিয়ে দিলেন কিভাবে ধীরে ধীরে একটি স্বপ্নকে লালন করে সেটাকে সফলতায় রূপ দেয়া যায়। হয়তো বা ক্রিকেটারই হতে পারতেন না তিনি। সেটা কেবল সম্ভব হয়েছে তার অদম্য ইচ্ছা আর অসম্ভব একটি সুন্দর স্বপ্নের কারণে।
এবাদত হোসেন ছিলেন মূলতঃ একজন ভলিবল খেলোয়াড়। সেখান থেকে হলেন ক্রিকেটার। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে নানা প্রশ্ন করতে গিয়ে সে প্রসঙ্গটাই এনেছিলেন সঞ্চালক। জবাবে এবাদত বলেছিলেন, ‘ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসার গল্পটা অনেক লম্বা। আমি ক্রিকেটটা উপভোগ করছি। বাংলাদেশ ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করাটাও।’
সেই লম্বা গল্পটাই জানাবো আজ। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন এবাদত হোসেন। আগে পাড়ার মাঠে মাঝেমধ্যে ক্রিকেট খেলতেন। বাবা চাকরি করতেন বিজিবিতে। বাবার দেখানো পথেই হাঁটলেন এবাদত। শৃঙ্খলিত জীবন গড়বেন বলে ২০১২ সালে যোগ দিলেন বিমান বাহিনীতে। নিয়মমাফিক জীবনের মাঝে সুখ খুঁজতে গিয়েও আবিষ্কার করলেন এটি তাঁর জন্য নয়। খেলার মাঠ এবাদতকে খুব টানে। যে কারণে ছকে বাঁধা জীবনে চাকরির পাশাপাশি চলছিল খেলাধুলাও; ভলিবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল এসব। এরপর বিমানবাহিনীর নিয়মিত ভলিবল খেলোয়াড় হয়ে যান।
কিন্তু ভলিবলেও নিজেকে বেধে রাখতে পারলেন না। কারণ তার মন পড়ে থাকে ক্রিকেট মাঠে। তার প্রতিষ্ঠান বিমানবাহিনীও এবাদতের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে। তার খেলাধুলায় বাধা দেয় না। যার ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে ক্রিকেটে নিজেকে জড়াতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান এবাদত। ক্রিকেটে পরিচিত হতে থাকেন ধীরে ধীরে। ২ বছর পর সামনে চলে আসে সূবর্ণ সুযোগ।
২০১৬ সালে রবির সহযোগিতায় বিসিবি আয়োজন করে পেসার হান্টের। সারাদেশ থেকে প্রতিভাবান পেসারদের তুলে আনার লক্ষ্য নিয়ে এই পেসার হান্টের আয়োজন করে তারা। এখানেই নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে যান এবাদত হোসেন। প্রথমে ঢাকা থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ফরিদপুর গিয়ে পেসার হান্টে অংশ নেন।
এবাদতের পাশাপাশি প্রায় ১৪ হাজার ৬৪১ জন প্রতিযোগী নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করতে সেখানে যান। এতো মানুষের ভিড়ে শুধু দুটি বল করার সুযোগ পান তিনি। যেখানে একটি বল করলেন ১৩৯.০৯ কিলোমিটার গতিতে। এই দুটি বল করেই নির্বাচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি। পেসার হান্টে নির্বাচিত হওয়ার পর পরবর্তী ধাপে পরীক্ষা দিতে এবাদত চলে আসেন ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে। এখানে পেসারদের নির্বাচিত করার কাজ ছিল পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাবেদের। বলের গতি দিয়ে কোচদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হন বিমাবাহিনীর এ তরুণ।
এমনকি সবর্শেষ প্রায় লক্ষাধিক প্রতিযোগীর মধ্যে পেসার হান্টে প্রথম হলেন তিনি। প্রায় ৬৩ জনকে বাছাই করা হয় প্রতিযোগিতাটি থেকে। এই কজনের মধ্যে ১৩৯ কিলোমিটার গতিতে বল করে প্রথমস্থান অধিকার করেন এবাদত।
এরপর তিনি চলে আসেন হাই পারফরমেন্স দলের হয়ে ট্রেনিং করতে। আকিব জাবেদও এবাদতকে নিয়ে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় ২০১৯ সালের মার্চে। নিউজিল্যান্ডের মঠেই তার অভিষেক ঘটে। কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন তিনি।
২০১৯ সালেই কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে ৯১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে একবার আলোচনায় আসেন এবাদত। এবার তো তিনি হয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। বাংলাদেশকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক এক জয়।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ | সময়: ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ