সর্বশেষ সংবাদ :

৯ জনের ফাঁসি, ২২ জনের যাবজ্জীবন

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা শাহীন আলম ওরফে শাহেন শাহ হত্যা মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় অপর আরও ২২ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক ও এইচ এম ইলিয়াস হোসাইন জনাকীর্ণ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
নিহত শাহেন শাহ রাজশাহী নগরীর কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি নগরীর গুড়িপাড়া এলাকার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। শাহেন শাহ হত্যা মামলায় মোট ৩১ জন আসামি ছিলেন। এ মামলায় সবার সাজা হয়েছে। আলোচিত এ মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন রাসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর রহমান। রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, গোবিন্দপুর পূর্ব রায়পাড়া এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান হিমেল (৩৮), তৌফিকুল ইসলাম চাঁদ (৪৫), গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিসুর ছেলে মো. মহাসীন (৫০), মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো. সাইরুল (২৬), নুহু শেখের ছেলে রজব (৩২), মৃত আক্কাস আলীর ছেলে বিপ্লব (৩৫), গুড়িপাড়া এলাকার গোলশের কশাইয়ের ছেলে মো. মমিন (৩০) এবং আব্দুস সামাদের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৬)। তাঁদের মধ্যে মমিন ও আরিফুল পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নগরীর বুলনপুর জিয়ানগর এলাকার মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে লাল মোহাম্মদ ওরফে লালু (৩৮), গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিসুর ছেলে মাহাবুল হোসেন (৪২), মৃত তাজু শেখের ছেলে সাত্তার (৪৫), মৃত আজিম আলীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩৮), মৃত ঝাড়ু শেখের ছেলে বখতিয়ার আলম রানা ওরফে রংলাল (৩৫), হাসান আলী (৩২), মৃত লিয়াকত মণ্ডলের ছেলে মাসুদ (৩৫), মৃত তাইদের ছেলে রাসেল (৩২), ইমদাদুল হকের ছেলে রাজা (৩২), মজিবর রহমানের ছেলে মর্তুজা (৩০), মো. মোস্তফার ছেলে সুমন (৩০), গুড়িপাড়া এলাকার মো. মহাসীনের ছেলে আসাদুল (২২), আখতারুল (২৫), মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে জইদুর রহমান (৪৮), মৃত গোলাপ শেখের ছেলে ফরমান আলী (৪০), মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদিন (২৫), রেজাউল করিমের ছেলে রাজু আহমেদ (২৮), মৃত মাজদার আলীর ছেলে আকবর আলী (৪৫), মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সম্রাট হোসেন (১৯), ওয়াজেদ আলীর ছেলে টিয়া আলম (৩০), মৃত আজম আলীর ছেলে আজাদ হোসেন (৩৫) ও মৃত ওয়াহেদ কশাইয়ের ছেলে মো. মাসুম (২৬)। এদের মধ্যে আজাদ ও মাসুম পলাতক আছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন নিহত শাহেন শাহর বড় ভাই রজব আলী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা মুনসুর রহমান। নির্বাচনে মুনসুর রহমান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরে শুরু হয় সহিংসতা। ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট মুনসুর ও তার সমর্থকেরা রজব আলীর মালিকানাধীন রজব অ্যান্ড ব্রাদার্সের গুদামঘর ও ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া শহীদ কামারুজ্জামান স্মৃতি সংঘ ভাঙচুর করে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। পরদিন ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহেন শাহকে পেয়ে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আসামিরা।
এ সময় তার কাছে থাকা মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর পিস্তলের ফাঁকা গুলি করতে করতে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা শাহেন শাহকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে নিহতের ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তের পর ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় সাক্ষী ছিলেন ২৪ জন। আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। গত বছরের ১১ নবেম্বর আদালতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর আদালত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এরপর দফায় দফায় রায় ঘোষণার দিন পেছানো হয়। প্রথম রায় ঘোষণার দিনের এক বছর পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হলো।
মামলার বাদী, নিহতের ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, এ রায়ে তারা সন্তোস্ট। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এ রায় কার্যকরের দাবি জানান।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২১ | সময়: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ