সর্বশেষ সংবাদ :

মহানন্দার তীরে ভাঙ্গন তিনটি গ্রাম নিয়ে শঙ্কা

এ কে এস রোকন, শিবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পালপাড়া ও পাশ^বর্তী গোমস্তাপুর উপজেলার ইসলামপুরের নন্দলালপুর এবং বাঙ্গাবাড়ীর বজ্রনাথপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীতে আকস্মিক শুরু হয়েছে ভূমি ধস। স্রোতের তীব্রতা না থাকলেও ধসের কারণে আতঙ্কে গ্রাম তিনটির ৫ শতাধিক পরিবার।
বিশেষ করে বুধবার রাতে নদীর ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি অংশে ধস নামায় এ আতঙ্ক আরো বেড়েছে। তবে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায় নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই স্রোতহীন অল্প পানির এ মহানন্দা নদীতে এ ভাঙ্গন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বপন পাল ও রতন পাল ২ ভাই। একজন এনজিও থেকে পাতিল বানানোর জন্য একটি যন্ত্র কিনতে ও ব্যবসার প্রসার বাড়াতে লোন নিয়েছেন। অন্যভাই পেয়েছেন সমাজ সেবা থেকে আর্থিক সহায়তা।
দুই ভাইয়ের সংসারে ১০ জন সদস্য নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু বুধবার রাতে আকস্মিক তাদের পাশের বাড়ির একটি অংশ নদী গর্ভে নেমে যাওয়ায় আতঙ্কিত।
স্বপন পাল জানান, একদিকে কিস্তি অন্যদিকে নদীতীরে ভূমি ধস আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
এদিকে সুন্দরী হলদার জানান, তার বাড়ির একটি ঘর ধসে যাওয়ায় ঘরের জিনিষপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছেন। আতঙ্কে বাড়ির ভেতরে ঘুমাতে না পেরে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
শুধু তাই নয় মহানন্দা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের একটি অংশ ধ্বসে যাওয়ায় পুরো পালপাড়া এখন আতঙ্কে। সেইসাথে পাশ^বর্তী ইসলামপুরের নন্দলালপুর ও বাঙ্গাবাড়ির বজ্রনাথপুর এলাকার ৩শ পরিবারও রয়েছেন একই আতঙ্কে।
এদিকে নদীর তীর ধ্বসের কারণ সর্ম্পকে স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু তোলার জন্য এ ভাঙ্গন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাম্য ডাক্তার জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী নিরুপায়। বছরখানেক আগে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে বলা হলে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর এবার গোমস্তাপুর অংশ বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় এ ভাঙ্গন।
চকর্কীত্তি ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার হাসান আনু মিঞা জানান, তিনি খবর পেয়ে বুবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংসদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানান। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ধস ঠেকাতে ১২শ জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর উদ্দ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে তা ফলপ্রসু খুব একটা হবে না।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন জানান, মহানন্দা নদীর তীর রক্ষায় ও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে ২২শ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার ৩৬ কিলোমিটার বাধায় করা হবে। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের অনুরোধে জরুরি ভিত্তিতে পালপাড়া অংশে ১২শ জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ আসনের সাংসদ ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল জানান, বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২১ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর