
রায়হান আলম, নওগাঁ: একটি বের করতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পরে অন্যগুলো। রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য প্রতিদিন বাড়ছে ফাইলের সংখ্যা। পুরাতন রেকর্ড ফাইলের সংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার। এ সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ঠাসাঠাসি ফাইলের এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের তাদের আসনে গিয়ে বসতে হচ্ছে দেহের নানান রকম কসরৎ করে। এভাবেই চলছে ২০০৮ সাল থেকে নওগাঁর (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সর্পোট অথরিটি) বিআরটিএ অফিসের কার্যক্রম।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নীচতলায় ৮ ফুট বাই ১০ ফুটের দুইটি কামরা আর সামনের অংশের সামান্য পরিসরেই চলছিল অফিস। কিন্তু এরমাঝে আবার কাঠবোর্ড দিয়ে কক্ষ তৈরী করে এ অফিসের মধ্যেই বোঝার উপর শাখের আঁটি হয়ে বসছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ’র প্রতিনিধিরা।
সরজমিন নওগাঁ বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সককারী পরিচালকের রুমে প্রবেশ করতে হয় একহাতের মত সরু স্থান দিয়ে। এ কক্ষের দরজার বালায় দড়ি বেঁধে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেকর্ড সংরক্ষণের সেল্ফগুলো টেনে বাঁধা হয়েছে। সেল্ফগুলো দরজার অর্ধেকটাই দখল করে আছে। সেল্ফগুলো রেকর্ড ফাইলের ভারে সামনের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। ওই সেল্ফ সামলাতেই এ ব্যবস্থা। এমভিআই এর কক্ষটিও তথৈবচ।
অফিস কক্ষে একসাথে ৩-৪জন ঢুকলে দাঁড়ানোয় দায় হয়ে যায়। যারাই ঢুকছেন তারাই বিরোক্তি প্রকাশ করছেন। এডি বা পরিদর্শকরে কাছে কোন পরামর্শ নিতে গেলে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে সেবা প্রার্থিদের। পাশ কাটিয়ে প্রবেশের মত কোন পরিসর নাই।
এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোট সংখ্যা ৬ জন। এডি ১ জন, এমভিআই ১ জন, এমএ ১ জন, ইউডিএ ১ জন এলডিএ ১ জন ও এও ১ জন। সকলেই এখন ঠাসাঠাসি করে বসে কর্মদিন গুলো পারি দিচ্ছেন। এমএ ও ইউডিএ পদের দুজন বদলী নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ওই দুইজন স্টাফ এ অফিসে জয়েন করে কোন ভাবে অফিসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের বসবার মত কোন জায়গাও ছিলনা। এখন এ অফিসে কর্মরত রয়েছেন বর্তমানে ৪ জন। অফিসটিতে প্রতিমাসে বিপুল পরিমান রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। বছরে প্রায় ৪০টির মত ডিসিটিবি বোর্ড হয়। তখন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ও অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পোরশা থেকে এসেছিলেন এমদাদুল হক। তাকে একটু সরে দাঁড়াতে বলতেই তিনি চরম বিরোক্তি নিয়ে আক্ষেপ করে বললেন, কী করবো ভাই সব তো দেখতে পাচ্ছেন। দাঁড়াব কোথায় বলেন তো।
কথা হলো এক এনজিও’র নারী কর্মীর সাথে। তিনি নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, আপনারা তো পুরুষ মানুষ হুটহাট ঢুকতে পারছেন মানুষ ঠেলে। আমরা কি করবো। এ অবস্থা কি কারো চোখে পড়ে না। যখন আসি তখনই দেখি একই অবস্থা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর নওগাঁর সহকারী পরিচালক ময়নুল হাসান বলেন, এভাবে বসে কাজ করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনেক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা হয়নি। মাঝে দুজন স্টাফ এসেছিলেন তাদের বসার জায়গা দিতে পারিনি। তারা যেকটা দিন ছিলেন অফিসের মধ্যে দাঁড়িয়ে ও ঘোরাফিরা করে কাজ করেছেন।
অবশ্য পরে ওই দুইজন স্টাফ অন্যত্র বদলী হয়ে চলে গেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ এর বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ এর নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রতিনিধিও এ অফিসেই বসছেন। আমরাও কিছু বলতে পারছিনা গ্রহকরা যাতে হয়রানীর শিকার নাহয় সেই কথা ভেবে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ জানান, সমস্যা সমাধানের জন্য আপাতত বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা হচ্ছে।