
শাহ্জাদা মিলন : রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড । উত্তরের আটটি জেলাকে নিয়ে পরিচালিত এই শিক্ষাবোর্ডের অধীনে প্রায় চার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার দিকগুলো মনিটরিং ও পাবলিক পরীক্ষাগুলো মনিটরিং করে, পাশাপাশি বর্তমান সরকারের শিক্ষা নিয়ে উদ্ভাবনী কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত কাজ করছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার জন্য রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কাজ করছে। দৈনিক সানশাইনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে কথাগুলো বলেন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.মোকবুল হোসেন।
তিনি জানান, অধ্যাদেশ ৬১ অনুযায়ী রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত হয়। এই অধ্যাদেশে চেয়ারম্যানের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের কার্যক্রমগুলো শিক্ষা বোর্ড কমিটি নামে একটি কমিটি অনুমোদন করে। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কোনো বিধি লঙ্ঘন করলে সেটা অনুমোদন বা অনুনামোদন করার অধিকার শুধুমাত্র শিক্ষা বোর্ড কমিটির। অধ্যাদেশটি এত সুস্পষ্ট যে এই বিষয়ে অন্য কোনো পক্ষের কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। ফলে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের উপর সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষমা অর্পণ করা হয়েছে। সেই ক্ষমতার আলোকে চেয়ারম্যানগণ শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা করে থাকেন।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী দুজনই আইনের মানুষ। আমি ৩০শে জুন ২০১৯ সালে দায়িত্ব নিয়েছি। তার আগে পরে বিভিন্ন বোর্ডে অন্যান্য চেয়ারম্যানগণ দায়িত্ব নেওয়ার পরে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে একটি আইনগত সচ্ছতা বিধিবিধানের সচ্ছতা করার কারণে আমাদের কতগুলো বিষয় সুনির্দিষ্ট করার জন্য একটা চলমান প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে- বোর্ড আইন-২০২১ অনুমোদন করা হচ্ছে। অধ্যাদেশ ৬১ যেটা ছিল সেটা বাংলায় অনুবাদ করা হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে তৈরি আইন দিয়ে শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত হতে পারে না। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি করতে যাচ্ছি। আমাদের এই সংস্থাগুলো এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও সময়োপযোগী আইন দিয়ে প্রণয়ন করতে হবে। সেজন্য আমরা এ ধরণের সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছি। এর পাশাপাশি নিয়োগ বিধি সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কাঠামো আমরা চেয়েছি। মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু জনবল কাঠামো সম্পর্কে আবেদন দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক বোর্ডের কার্যক্রম একই রকম হওয়া এটা সমন্বিত হবে। সুতরাং জনবল কাঠামোটাও সেই বোর্ডের চাহিদা মোতাবেক ও প্রয়োজন মোতাবেক সেটা জনবল নিয়োগ হবে। এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলো আমাদের সংস্কার হচ্ছে, চলমান অবস্থায় আছে। ফলে দীর্ঘদিনের একটা জটিল অবস্থা ছিল সেই জটিল অবস্থা থেকে একটা স্বচ্ছতার দিকে আসছি।
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে দাপ্তরিক দৈনন্দিন কাজগুলো সেগুলো সবগুলো ম্যানুয়ালি ছিল। সেইটা আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে অটোমেশন তথা অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অনলাইনে সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য অনেক দূর এগিয়েছি। এমনকি নথিগুলোও ই-নথির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশে^র যেকোনো প্রান্ত থেকে নথিতে স্বাক্ষরসহ অফিসিয়াল কাজের অনুমোদন করা যাচ্ছে। ফলে রাজশাহীতে না থেকেও ২৪ ঘণ্টা অফিস করা যাচ্ছে। যদিও রাজশাহী বোর্ডের ৩০টি শাখার সবগুলোতে এখনও ই-নথি চালু হয়নি। তবে বেশ কিছু শাখায় এটা চালু হয়েছে। এরপর টিসি প্রদান কার্যক্রমকেও ই-টিসির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে অনলাইনেই শিক্ষার্থীদের টিসি দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আবেদন করা মাত্রই কোনো ভোগান্তি ছাড়াই অনলাইনে টিসি পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে অনলাইনেই নাম ও বয়স সংশোধন করা হচ্ছে। এরপর অনলাইনে ভর্র্তি প্রক্রিয়াও সহজীকরণ করা হয়েছে। ফরম ফিলাপও অনলাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ভর্তি পরীক্ষার অন্যান্য উপকরণ গুলো ডিজিটালাইজেশনের জন্য আমরা সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ঘরে বসেই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে যাচ্ছে। অথচ আগে স্কুল বা কলেজে গিয়ে নিজের ফলাফল জানতে হতো শিক্ষার্থীদের। এখন মোবাইলেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড ও টেলিটক মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।