
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর পবা উপজেলায় তিন মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ১৯টি কবরের ওপর মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। জমিটি দখলে রাখতে উপজেলার খোলাবোনা দাখিল ও আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পারিবারিক কবরস্থানের ওপর এই ভবন নির্মাণ করছে।
স্থানীয়দের দাবি ২০১৪ সাল থেকেই ভবনটি নির্মাণের চেষ্টা চলে আসছে। বিষয়টি থানা পুলিশসহ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। অভিযোগের পর বিবাদমান জমিতে ভবন নির্মাণ না করার জন্য পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে গত কয়েকদিন থেকে হঠাৎ কাজ শুরু করা হয়েছে। ২০১৪ সালের দিকে কবরের ওপর তোলা পিলারের সঙ্গে শনিবার ইট গেঁথে প্রাচীর দেয়া হচ্ছে।
কবরস্থান রক্ষায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা দামকুড়া থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তারা আদালতে মামলাও করেন।
জানতে চাইলে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা দামকুড়া থানার উপ-পরিদর্শক আজিজুর রহমান বলেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। সেখানে যেন কোন কিছু করা না হয় তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে কাজ শুরু হলে আমি বন্ধ করি। শনিবার সাক্ষ্য দিতে আমি বাইরে এসেছি। এখন আবার কাজ শুরু করা হয়েছে বলে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। আমি বিষয়টি থানায় জানিয়েছি।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খোলাবোনা এলাকায় পাশাপাশি দুটি মাদ্রাসা। একটির নাম খোলাবোনা ফোরকানিয়া ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। আরেকটি খোলাবোনা দাখিল ও আলীম মাদ্রাসা। দুই মাদ্রাসার মাঝে একটি সীমানা প্রাচীর। খোলাবোনা দাখিল ও আলীম মাদ্রাসার পূর্বপাশের স্থানটিকে কবরস্থান বলছেন স্থানীয়রা। আর এখানেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যে স্থানে পিলার তুলে প্রাচীর করা হচ্ছে সেটি আসলে কবরস্থান। এখানে মুক্তিযোদ্ধা তিন ভাইয়ের কবর রয়েছে। তারা হলেন, আনারুল ইসলাম, আসাদ আলী ও শাহজাহান আলী। জমিটি এখন ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে রেকর্ড হয়ে আছে। কিন্তু জমিটি জোর করে দখলে নিতে কবরস্থানের ওপরেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূরে আলম (৪০) জানান, জমিটির মালিক ছিলেন প্রয়াত তিন মুক্তিযোদ্ধার চাচা জকিম উদ্দিন মণ্ডল। এখানে তার মোট ৩৩ শতক জমি ছিল। তার মৃত্যুর পর কয়েকবছর আগে জমির ১০ জন ওয়ারিশ ২০ শতক জমি ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে দান করেন। কিন্তু পরে তারা দেখেন অনেক আগেই ভুল করে ওই মাদ্রাসার নামে ১০ শতক জমি রেকর্ড হয়ে গেছে। এখন ৩০ শতক জমিই রয়েছে ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে। বাকি তিন শতক আছে জকিম উদ্দিন মণ্ডলের ওয়ারিশদের। কিন্তু ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে ৩০ শতক জমি থাকলেও এই জমিতেই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে আলীম মাদ্রাসা। এটি এখনই বন্ধ করা হোক।
প্রয়াত তিন মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্নে ওসমান গণি (৫৯) বলেন, তারা খুশি মনেই ফোরকানিয়া মাদ্রাসাকে ২০ শতক জমি দান করেন। কিন্তু পরে তারা দেখেন- তাদের ১৯ জন আত্মীয়-স্বজনের কবরও একই মাদ্রাসার নামে রেকর্ড হয়ে আছে। তাই রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করা হয়। এই মামলায় ফোরকানিয়া মাদ্রাসার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত আসার আগেই পাশের আলীম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কবরস্থানটি দখল করে নিচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে নির্মাণ কাজের বিষয়ে কথা বলতে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল আকতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই তার মন্তব্য জানা যায়নি। খোলাবোনা আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মিকাইল হোসেন বলেন, আমাদের উপর যে মামলা তারা করেছিল গত ৭ ফেব্রুয়ারি তা খারিজ করে দেয় কোর্ট। তাদের কোন আপীল না থাকায় আমারা কাজ শুরু করেছি। এরপর তারা আবার বাদী হয়ে আমাদের ওপর ৭ মার্চ আরও একটি মামলা করেছে। আগামী ২৫ মে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। আদালত যে নির্দেশনা দিবেন সেটি আমরা মানতে বাধ্য।
দামকুড়া থানার ওসি মাহাবুব হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ বন্ধের বিষয়ে নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞার কাগজ দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।