স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ সদস্য, শিক্ষক ও এক নারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে হেনস্তা এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারী মুক্তি সংসদের রাজশাহী জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারী মুক্তি সংসদের রাজশাহী জেলার সভাপতি অধ্যাপিকা তসলিমা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর বেগম, মহিলা পরিষদের জেলার সভাপতি কল্পনা রায় ও সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিদ্যাপিঠে শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদের মতো শিক্ষিতদের দ্বারা দুইজন ছাত্রীকে যদি পোশাক নিয়ে হেনস্তা হতে হয়, তবে স্বাধীনতার এতো বছর পরও নারীর প্রকৃত অধিকারের বিষয়গুলো আমাদের ভাবিয়ে তোলে। একজন মেয়ে সে কি পড়বে, কীভাবে চলবে; তার সম্পূর্ণ অধিকার যদি রাষ্ট্র তাদের দিয়ে থাকে, তবে তারা কে এ বিষয়ে একজন নারীকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার?’
বিবৃতিতে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে নারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ক’দিন আগেই আমরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিশ্ব নারী দিবস পালন করেছি। নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে সভা-সমাবেশসহ রাস্তায় শোভা যাত্রাও করেছি। আমরা আলোচনা সভায় বলি এক, বাস্তবে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করি আরেক।’ একজন শিক্ষক ও পুলিশ সদস্য যদি নারীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন; তবে নারীদের অধিকার নিয়ে প্রতিবাদের কোন ভাষা থাকে না। অতএব ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে এ ঘটনার সাথে যুক্ত সকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর কাজলা গেটের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও তাদের মানসিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ উঠে পুলিশ সদস্য, শিক্ষক ও এক নারীর বিরুদ্ধে। দুই ছাত্রীর একজন এ নিয়ে ওই দিন রাতে ফেসবুকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের একটি গ্রুপে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পোস্ট দেন। এরপর পোস্টটি নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
ভুক্তভোগী ছাত্রী গ্রুপে দেয়া সেই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেইট সংলগ্ন মসজিদের সামনে দাঁড়ালে এক ব্যক্তি এসে উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করেন। ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই মেয়ে এখান থেকে যাও, লজ্জাশরম নেই? মসজিদের সামনে দাঁড়িয়েছো কেন?’
এমন সময় সিভিল পোশাক পরা এক পুলিশ সদস্য তাদেরকে গালি দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পোশাকের ঠিক নেই, নির্লজ্জ। আপনাদের ওড়না ঠিক নেই, বেয়াদব মেয়ে মানুষ।’ তখন তারা ওই পুলিশকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আমার বাবার বয়সী। আপনি কেন আমার ওড়না ও পোশাক নিয়ে কথা বলবেন?’ বাকবিতন্ডার সময় সেখানে এক মহিলা সেখানে উপস্থিত হন। তিনি এসেই বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে এখনো ওড়না দিয়ে শরীর ঢাকোনি?’
রাবিতে দুই ছাত্রীকে হেনন্তা নারী মুক্তি সংসদ ও মহিলা পরিষদের ক্ষোভ
মার্চ ১৪
০৫:৩৪
২০২১