
স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অজ্ঞাত হিসেবে ২০২০ সালের জুন মাসে ভর্তি হয়েছিল নুরজাহান (৫০)। মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে বাড়ির ঠিকানাও বলতে পারছিলেন না। ববাবরের মতো এগিয়ে আসেন হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডের আয়া আলেয়া বেগম। পায়ে অনেক বড় ক্ষত নিয়ে ভর্তি হয় নুরজাহান। সেবা চলতে থাকে নিরলস। দীর্ঘ ৬ মাস চলে চিকিৎসা। সুস্থ হয়ে উঠে নুরজাহান। চলতি বছর নুরজাহান তার বাড়ির ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে পারে। সেই ঠিকানা ধরেই পরিবারের লোকজনের হাতে নুরজাহানকে তুলে দেন আলেয়া বেগম।
পরিবারে ফিরে যাওয়া নুরজাহানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মৌলকৃপা উপজেলার কুনচারা গ্রামে। দীর্ঘদিন পরে নুরজাহানকে ফিরে পেয়ে আবেগমিশ্রিত বিষ্ময় প্রকাশ করেন স্বজন থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজন।
নুরজাহানের ছোটভাই মনিরুল ইসলাম জানান, নুরজাহান মানসিক প্রতিবন্ধী। প্রায় ৭ মাস আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। এরপরে অনেক খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন একরকম আশা ছেড়েই দিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহের রহমতে আমরা বোনকে ফিরে পেয়েছি।
নুরজাহানের বাবা বদর উদ্দিন মল্লিক জানান, মেয়েকে ফিরে পাবো তা ভাবিনি। মেয়েটি ভালো ছিল। বিয়েও দেয়া হয়েছিল। ১৫ বছর স্বামীর ঘরে সংসর করে। এরপরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিজের কাছে এনে রাখেন।
রামেক হাসপাতালের আয়া আলেয়া বেগম জানান, ৭ মাস আগে হারালেও নুরজাহান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক মাস পরে। এরপর থেকে তিনি তার দেখাশোনা করতেন। প্রথমে পায়ের ক্ষতটা মারাত্বক পর্যায়ে ছিল। পরিচর্যা ও আল্লাহের দয়ায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন নুরজাহান।
আলেয়া বেগম আরো জানান, নুরজাহানের কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা জানার জন্য প্রায় চেষ্টা করা হতো। চলতি বছরের প্রথমের দিকে নুরজাহান তার বাড়ির ঠিকানা বলেন সঠিকভাবে। এরপরে তাকে পরিবারের কাছে নিয়ে আসা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে শেষের দিকে আলেয়া বেগম প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবী সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছিলেন। একই বছর প্রথমের দিকে মানুষের সেবার জন্য রাধুনী কীর্তিমতী নারীর পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন।
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে আসা ‘অজ্ঞাতনামা’ রোগিদের সঙ্গে। আলিয়া বেগম হয়ে ওঠেন তাদের আশ্রয়, অভিভাবক। সেবা করার পাশাপাশি ওই সব অসহায় মানুষের ঠিকানা খুঁজে বের করাটাই তার কাজ।
দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন আলেয়া বেগম। অল্প বেতনে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই তার কাছে সুখের। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন অজ্ঞাত রোগি সেবা করে সুন্থ করেছেন আলেয়া। এতোদিনের কাজে কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি নিজ হাসপাতালেও না। অবশ্য তাতে কোন কষ্ট নেই আলেয়ার। নিরবেই এ কাজ তিনি করে যাচ্ছেন ১৩ বছর ধরে।