স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: বাগমারা উপজেলার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশিদের চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা না রাখার অভিযোগ এনে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পরিবারটি মানসিকভাবে চাপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে পড়েছে।
ভূক্তভোগি ও এলাকার লোকজনের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের বইকুড়ি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক গোলাম রহমান (৭১) সম্প্রতি নতুন বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। ফলে প্রতিবেশিদের চলাচলের রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এজন্য তিনি বাড়ির অন্যপাশে তার জমিতেই আরেকটি রাস্তা তৈরি করেন চলাচলের জন্য। এতে গ্রামের কিছু ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তারা আগের রাস্তাটি আরও প্রশস্থ করার দাবি জানান।
এ নিয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে স্কুলশিক্ষকের বিরোধের সৃষ্টি হয়। বিভিন্নভাবে শিক্ষক পরিবারকে হেনেস্থা করতে থাকেন ওইসব ব্যক্তিরা।
এদিকে গত বুধবার গ্রামের লোকজন শিক্ষকের বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের কোনো সদস্য যাতে বের হতে না পারে এজন্য পথে বেড়া দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় রাতে পাড়ার কিছু লোকজন বসে বৈঠক বসিয়ে শিক্ষক পরিবারকে একঘরে করে রাখেন।
গ্রামের মাতব্বর আকরাম হোসেন, রহিম উদ্দিন, মুনসুর রহমান, এনামুল হক ওই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন বলে জানান গ্রামবাসী। পরে তাদের সঙ্গে কেউ কথাবার্তা বলতে এবং মেলামেশা করতেও পারবেন না বলে ওই বৈঠকে ঘোষণা দেওয়া হয়। সে থেকে পরিবারটি একঘরে অবস্থায় রয়েছে।
এলাকাবাসির সুত্রে জানা যায়, পরিবারটিকে একঘরে ও অবরুদ্ধ করে, বাড়ির তিনপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষক গোলাম রহমানের জমিতেই বেড়াগুলো দেওয়া হয়। তাঁরা যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন সেভাবে তৈরি করা হয়েছে বেড়াগুলো। নিরুপায়ে পরিবারটি নিজবাড়িতেই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে স্কুলশিক্ষক গোলাম রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। দুইজনেই অবসরে আছেন। বাড়িতে শুধুমাত্র তাঁরাই থাকেন। এই সুযোগে প্রতিবেশিরা তাঁদের ওপর নির্যাতন করছেন। এমনকি বাড়ির পাশের মসজিদেও তাকে নামাজ আদায় করতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে গ্রামের মাতব্বর আকরাম হোসেন বাঁশের বেড়া দিয়ে পরিবারটির চলাচলের পথ বন্ধ ও একঘরে করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, তিনি (স্কুলশিক্ষক) তাদের চলাচলের পথ দেননি এজন্য তাঁরা বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাজটি করা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামের লোকজন বসেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
এই বিষয়ে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগমারায় বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ শিক্ষক পরিবার
ডিসেম্বর ২৭
০৫:৫৪
২০২০