
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদী ও নদীর পাড় হতে অবৈধভাবে কেটে নেয়া মাটি ও বালু। নদী পাড়ের এসব মাটি-বালু কাটায় হুমকির মুখে পড়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার, কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন প্রতিদিন ৭০০-৮০০ ট্রাক্টর মাটি ও বালু কেটে নেয়া হয়। এতে হুমকিতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে নদী রক্ষা বাঁধ।
স্থানীয়রা বলছেন, শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুর এলাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নাম ব্যবহার করে এসব মাটি-বালু কাটা হচ্ছে।
জানা যায়, পাঁকা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাবুপুর দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী সাইদুর রহমান এবং উজিরপুর এলাকার ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করেন এ অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার সমস্ত কার্যক্রম।
এনিয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে চেয়ারম্যান সাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করা হয় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বরাবর। তবে এখনও এনিয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ দিন থেকে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ ট্রাক্টর মাটি ও বালু কেটে নেয়া হয়।
শিবগঞ্জ, কানসাট, উজিরপুর, দুর্লভপুর, খাসেরহাট, সোনামসজিদসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুর সাত্তার মোড়ের পদ্মার এসব মাটি-বালু।
এসব বালু ব্যবহার করা হচ্ছে এসব এলাকায় থাকা বিভিন্ন ইট ভাটা ও স্থাপনায়। মোটা বালু বিক্রি হচ্ছে ট্রাক্টর প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা, পাতলা (ভরাটের জন্য) বালু ৩০০-৪০০ টাকা এবং মাটি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ শফিকুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই এ এলাকায় প্রতিবছর বিপুল পরিমান জমি পদ্মার ভাঙ্গনে তলিয়ে যায়। তার উপর পদ্মা নদী হতে এসব বালু-মাটি কাটার ফলে আরো হুমকিতে পড়েছে এই এলাকার ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি। তিনি আরো জানান, এসব বালু-মাটি কাটা বন্ধ না করলে আগামী কয়েক বছরে নিঃস্ব হয়ে যাবে এ এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে গিয়ে বাবুপুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা পাড়ে প্রায় ৯ বিঘা কৃষি জমি ছিলো। সেসব জমিতে গম, মসকলাইসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতাম। কিন্তু ৯ বিঘার মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ বিঘা জমিই তলিয়ে গেছে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। আমার মতো এমন কয়েক হাজার কৃষক রয়েছে যাদের বিভিন্ন পরিমানে ফসলী জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে পদ্মা হতে মাটি-বালু কাটতে থাকলে অচিরেই বিলীন হবে এই এলাকার সকল ফসলী জমি।
গত কয়েক বছরে এ এলাকার অনেকেই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, এ গ্রামের অনেকেই পদ্মায় ভাঙ্গনের ফলে নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। যেভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি-বালু কাটা হচ্ছে তাতে এসব এলাকার প্রায় ৫৫০ পরিবার আরো বেশি হুমকিতে পড়েছে। এছাড়াও এখানকার কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি খুব দ্রুতই বিলীন হয়ে যাবে এভাবে মাটি-বালি কাটতে থাকলে।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, যেসব জমি-বালু কাটা হচ্ছে, এসব জমি বিভিন্ন জনের রেকর্ড ও বন্দোবস্ত করা। জমির মালিকদের কাছে ভাড়া নিয়ে এসব মাটি-বালু কাটা হচ্ছে। এতে কোন ক্ষতি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী বলেন, এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।