
আসাদুজ্জামান নূর : তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপের জাত ‘রেড লেডি’। যা বাংলাদেশের আবহাওয়াতে চাষ উপযোগী। দেশের বিভিন্নস্থানে এর চাষ হচ্ছে। দ্রুত সময়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় অধিক ফলন সম্পন্ন এই পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন রাজশাহীর কৃষকরা। কৃষকদের উৎসাহ ও উৎপাদন বাড়াতে সহযোগিতা প্রদান করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রাজশাহীর শাহমখদুম ফকিরপাড়া এলাকার চাষি গাফফার হোসেন। ৭ বিঘা জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। প্রতি মাসে আয় করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। ২০ থেকে ২২ দিন পরপর এসব জমি থেকে দেড়’শ থেকে ১৬০ মণ পেঁপে বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি মণ পেঁপে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতারা কিনছেন এসব পেঁপে।
গাফফার হোসেনের মতো পবা উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এই কৃষকদের অধিকাংশই পূর্বে আলু চাষ করতেন। রেড লেডি পেঁপে থেকে একটানা দুই বছর ফল পাওয়া যায়। সেইসাথে আলুর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই আলুর চাষ কমিয়ে এই পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন তারা।
রাজশাহীর পবা সিলিন্দা এলাকার চাষি জামসেদ আলী বলেন, গত বছরের শুরুর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রেড লেডি পেঁপের চারা নিয়ে আসি। গাছের বয়স ৭ থেকে ৮ মাস হলে ফল আসতে শুরু করে। এখন আমার দুই বিঘা জমিতে পেঁপে আছে। আরো ২ বিঘা বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। ২২ দিন পরপর ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে ৫৫-৬০ মণ করে বিক্রি করছি। সামনে কয়েকদিন পর আবার বিক্রি হবে। গড়ে ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়।
তিরি আরো বলেন, প্রতিবার ফল ভাঙ্গার পর ডিএপি, ইউরিয়া, পটাস, সালফার দিতে হয়। বৃষ্টি না হলে সেঁচ দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর সার প্রয়োগ করি। প্রতি বিঘাতে মাসে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার; আর সর্বনিম্ন পেঁপে বিক্রি হয় ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান আপা প্রায়ই আমাদের এখানে আসেন; পরামর্শ দেন। আমি এখন অনেক লাভ করতে পারছি।
রাজশাহীর পবা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, কয়েক বছর থেকে কৃষকেরা আলু ও বেগুন চাষের জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন।
দেশি জাতের পেঁপের চেয়েও রেড লেডি পেঁপের গাছে ফল বেশি ধরে। ফলের রং লাল-সবুজ। একেকটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল। সুগন্ধিযুক্ত ও স্বাদে বেশ মিষ্টি। স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে এই পেঁপের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চৈত্র মাসের প্রথম দু-সপ্তাহের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। ২৪ থেকে ২৫ মাস পর্যন্ত একটানা ফলন পাওয়া যায়। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৪০টির বেশি ফল হয়। পাকা অবস্থায়ও অনেক দুরদুরান্তে সহজেই বাজারজাত করা যায়। রোগবালাই প্রতিরোধ ও সহনশীলতা দেশী জাতের পেঁপের চায়তে অনেকটাই বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর জানায়, হেক্টরপ্রতি ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম বীজ দরকার পড়ে। সে হিসেবে ৩ হাজার ২০০ চারা দিয়ে ১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা লাগানো যায়। চারা লাগানোর পর নতুন পাতা এলে ইউরিয়া ও এমপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল এলে এ মাত্রা দ্বিগুণ হবে। শেষ ফল সংগ্রহের আগেও সার দিতে হবে।
শুরু থেকেই পরিচর্যা করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল হলে কিছু ফল ছিড়ে নিতে হবে। বাকি ফল এতে বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। পেঁপে গাছে বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, রাজশাহীতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পেঁপে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩’শ ৫৪ হেক্টর। এসব জমি থেকে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৪৪ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন পেঁপে। চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সামনের বছর আরো বাড়বে। রেড লেডি জাতের পেঁপে খুব মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণও ভালো। স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। যারা এ পেঁপের চাষ করছেন তাদের প্রত্যেককে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।